স্বপ্নের মতোই মনে হলো সোনমার্গ

রাদিয়া তামিম

‘কাশ্মীর’ ছোটবেলায় দেখা পাকিজা সিনেমায় মিনাকুমারীর সেই নদীর ধারে দৃশ্যটি তখন থেকেই আমার মনে গেঁথে গিয়েছিল। মনে হতো স্বপ্নের মতো সেই জায়গা। জাহাঙ্গীরের ভাষায় ,‘যদি পৃথিবীতে স্বর্গ থেকে থাকে তবে এখানেই এখানেই।’ হঠাৎ করেই কাশ্মীর যাবার সেই ইচ্ছেটা পূরণ হয়ে গেল। আমি আব্বুকে নিয়ে রওনা হয়ে গেলাম, আমার মতো তারও ভূস্বর্গ দেখার আজন্ম ইচ্ছা। আমরা ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসের ৫ তারিখে কাশ্মীরের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। মনের ভিতর উত্তেজনা কেমন হবে? কি দেখব? 

ঢাকা থেকে কলকাতা হয়ে শ্রীনগর। কলকাতায় এক রাত থেকে পরদিন সকালে রওনা হলাম। পুরো পথটাই আমরা প্লেনে করে গেলাম সময় বাঁচাবার জন্য। শ্রীনগর পৌঁছাতে পৌঁছাতে বিকেল হয়ে গেল। এয়ারপোর্টে গাড়ি অপেক্ষা করছিল হোটেলে নিয়ে যাবার জন্য। সেখানে আমাদের গ্রুপের অন্যদের সাথে দেখা পরিচয় হলো। হোটেলে পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে আমরা রওনা হলাম টিউলিপ গার্ডেন এর উদ্দেশ্যে। ভারতের সবচেয়ে বড় টিউলিপ গার্ডেন। টিউলিপ গার্ডেন অদ্ভুত এক রঙের মেলা। নানা রংয়ের ডালা মেলে যেন বসেছে পাহাড়ের কোলে সে কি শোভা। চোখে না দেখলে বিশ্বাস হয় না। ফেরার পথে কাশ্মীরি খাওয়াহ খেলাম। এটা একরকম গ্রিন টি নানা জাতের গরম মসলা ,জাফরান ,মধু ,বাদাম দিয়ে তৈরি করা হয়।

 

লেখিকা

পরদিন আমরা রওনা হলাম সোনমার্গ এর উদ্দেশ্যে। সোনমার্গ কারগিল বর্ডারের কাছে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৯২০০ ফুট উপরে। রাস্তা না কি গতকালই খুলেছে। কারগিলের যাওয়ার রাস্তা ছয় মাস বন্ধ থাকে। পথে আবার আমাদের গাড়ি বদলাতে হল। কাশ্মীরের এক এলাকার গাড়ি অন্য এলাকায় যেতে পারে না কারণ টুরিস্ট এরিয়া ভাগ করা আছে। একটি জায়গায় থেমে আরেকটি গাড়ি ভাড়া করে আমরা রওনা হলাম। জায়গাটা বেশ সুন্দর। পাশে পাহাড়ি নদী বয়ে চলছে । নদীর ধারে ছোট ছোট অনেকগুলো থাকার হোটেল আছে। নদীর ওপারে বরফাবৃত পাহাড়। সব মিলিয়ে দুর্দান্ত। সামারে হোটেল গুলি খোলা থাকে, এখন বন্ধ। আবার জুলাই অগাস্টে খুলবে।

আমরা আবার রওয়ানা হলাম। রাস্তা এখন যথেষ্ট সরু আর ভয়ংকর। রাস্তার পাশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। রাস্তার অনেক নিচে বয়ে চলছে পাহাড়ি নদী । পাহাড় থেকে নেমে এসেছে গ্লেসিয়ার। চারিদিকে বরফে ঢাকা উঁচু উঁচু পাহাড় । উফ কী যে অদ্ভুত সুন্দর!  এই নদীতে ট্রাউট মাছের চাষ করা হয় ড্রাইভার জানালো। মাঝে মাঝে রাস্তায় এত সরু হয়ে যাচ্ছে যে পর পর দুটো গাড়ি পার হতে পারেনা। আমাদেরকে গাড়ী নিয়ে অনেকক্ষণ রাস্তার এক পাশে দাড়িয়ে থাকতে হল কারণ আর্মির রসদ ভর্তি ট্রাক পার হলো। ১০/১৫ ফুট পুরু বরফ কেটে রাস্তা তৈরি করতে হয় এখানে, আমাদের গাড়ি তার মধ্যে দিয়ে গেল। এর মধ্যে এক জায়গায় থেমে বরফে হাটার জুতো ভাড়া করলাম।

পিতার সঙ্গে লেখিকা 

তারপর যার যার সাইজ মতো জুতা পরে নিলাম। কিছুক্ষণ পরেই পৌঁছে গেলাম সোনমার্গ, বরফের রাজ্যে। চারিদিকে শুধু বরফ, বরফ আর বরফ। ট্যুরিস্টদের দেখলাম বরফ নিয়ে খেলছে। নানা ধরনের গাড়ি দেখা গেল বরফের মধ্যে চালানোর জন্য। আমরা বরফের উপর একটি স্লেজ জাতীয় গাড়িতে উঠলাম। গাড়িটি আমাদের পাহাড়ের উপরে নিয়ে গেল বেশ উত্তেজনা কর রাইডটি। আব্বু সারাক্ষণই একটি পাথরের উপর বসে রইল যদি বরফে পিছলে পড়ে যায় এই ভয়ে। আশ্চর্যের ব্যাপার কি একটুও ঠাণ্ডা নেই। আমরা রীতিমতো ঘামছিলাম।

কিছুক্ষণ বরফের মধ্যে ছবি তুলে খেলাধুলা করে আমরা শ্রীনগরে যাওয়ার জন্য রওনা দিলাম। পথে আমরা একটি গ্লেসিয়ারের পাশে থামলাম। একটি পাহাড়ি নদীতে এসে পড়ছে। অদ্ভুত সুন্দর এক পরিবেশ। আমি নদীর কাছে ঝুলিয়ে বসে থাকলাম অনেকক্ষণ। ফিরে যেতে ইচ্ছে করছিল না। এদিকে সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে। পাহাড়ি রাস্তা তাই তাড়াতাড়ি ফেরার পথ ধরলাম। পরদিন গন্তব্য ইয়ূসমার্গ। (চলবে) 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

আমাদের সাবস্ক্রাইব করুন
Please log in to share your opinion

Related Posts

আমাদের সাবস্ক্রাইব করুন