বছরের আর দশটা মাস তার কাটে সাধারণ দশটা নারীর মতো রান্নাঘরে। তবে বাকি দুই মাস তিনি হয়ে যান অসাধারণ। সাধারণ কোন নারী যা কল্পনাও করতে পারেন না তিনি করে যান অবলীলায়। আর এভাবেই একের পর এক রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়ে তিনি একবার দুইবার না নয়বার পৌছেছেন এভারেস্টের চূড়ায়। বলছি অসাধারণ সাহসের অধিকারী এক নারী লাহাকপা শেরপার কথা।
জন্মস্থান নেপাল হলেও বর্তমানে চূয়াল্লিশ বছর বয়সী লাহাকপা থাকেন আমেরিকার কানেক্টিকাট অঙ্গরাজ্যে। সেখানে হোলফুড নামের রেস্তোরাঁর রান্নাঘরের ঘণ্টা চুক্তিক্তে থালা বাসন ধোওয়ার কাজ করেন। কিন্তু যার জন্ম হিমালয়ের পাদদেশে, যে বড় হয়েছে হিমালয়ের বাতাস গায়ে মেখে সে কি হিমালয় ছেড়ে দুরে থাকতে পারে?
ফলে বছরের দশ মাস আমেরিকান রেস্তরাঁয় কাজ করলেও পর্বত আরোহণের মৌসুমে তিনি ছুটে যান নেপালে। কাজ করেন শেরপাদের আদি পেশা পর্বত আরোহীদের সহকারী হিসেবে। তবে এটা তার মৌসুমি পেশা নয়, নেশা বলা চলে। আর এই নেশায় তাকে নয় বার পৌছে দিয়েছে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত চূড়ায়। যেটা এ যাবত কালের এভারেস্ট চূড়ায় ওঠা নারীদের মধ্যে সর্বোচ্চ।
এতদিন ভাইয়ের এজেন্সিতে কাজ করলেও এখন তার নিজের একটি এজেন্সি খোলার পরিকল্পনা করছেন তিনি। নিজে এতবার হিমালয় ট্রেকিং করলেও সন্তানদের এপেশায় আনতে চান না তিনি। কারণ এটি যেমন কষ্টসাধ্য তেমনি ঝুকিপূর্ণ। যেকোন সময় মৃত্যু অবধারিত এই পেশায়। একটি পরিসংখ্যান থেকে তার কথার সত্যতা পাওয়া যায়। এপর্যন্ত যত জন এভারেস্ট আরোহণ মারা গেছেন তার এক তৃতীয়াংশ শেরপা।
লাহাকপা শেরপা যখন প্রথম এভারেস্ট চূড়ায় আরোহণ করেন তখন তার বয়স ছিল সাতাশ বছর। এরপর একে একে কেটে গেছে সতেরো বছর। তবে এই দীর্ঘ সময় এবং এতবার এভারেস্টে চূড়ায় উঠলেও তার উৎসাহে একটুও ভাটা পড়েনে। এবিষয়ে তিনি বিজনেস ইনসাইডারকে বলেন, ‘ আমি পর্ব আরোহণে আসক্ত। পর্বত আরোহণ না করলে আমি বরং অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাই আমি বার বার ফিরে যেতে চাই হিমালয়ের কাছে।‘ তার কথা এবং কাজের মধ্যে কোন তফাত নেই। কারণ দশম বারের মতো এভারেস্ট আরোহণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন দুই সন্তানের জননী লাহাকপা।