পাহাড়ে শত বছরের হাট

ট্রাভেলগবিডি ডেস্ক 

নৌকাগুলো এসেছে দূর পাহাড়ের কোনো এক পাড়া থেকে। কোনো নৌকায় আনা হয়েছে কলা, উলু ফুল, কোনোটায় আলু, আদা, হলুদসহ নানা কৃষিপণ্য। একটার সঙ্গে আরেকটা নৌকা পানিতে ভাসছে। ক্রেতা-বিক্রেতায় চলছে দরদাম, হাঁকডাক, বিকিকিনি। দৃশ্যটি মেরুং বাজারের। খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা সদর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে ছোট মেরুং বাজার। মাইনী নদীর পাড় ঘেঁষেই বাজারের অবস্থান। স্থানীয় লোকজন বলেন, এ হাট বসছে শত বছর ধরে।

দীঘিনালার মাইনী নদীর পাড় ঘেঁষেই এ হাট বসছে শত বছর ধরে

ঐতিহ্যের মেরুংয়ে হাট বসে সপ্তাহে এক দিন, প্রতি বৃহস্পতিবার। সেদিন পণ্য আনেন পাহাড়ি–অধ্যুষিত ২২টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। ভাসমান মেরুং বাজার শুধু বিকিকিনির জন্য নয়, হাটবার মানেই পাহাড়ি-বাঙালি, ক্রেতা-বিক্রেতার এক সম্প্রীতির মিলনমেলা। ১ নম্বর মেরুং ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান রহমান কবীর যেমনটি বলেন, দীঘিনালা উপজেলার মধ্যে এটি একটি ঐতিহ্যবাহী হাট। হাটের বয়স শত বছর তো হবেই।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীঘিনালায় একসময় যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম ছিল মাইনী নদী। শত শত নৌকা বোয়ালখালী, মেরুং, মাইনী হয়ে চট্টগ্রামের চাকতাই যেত। আবার চাকতাই থেকে বিভিন্ন পণ্য নিয়ে একই পথে ফিরে আসত। দাঁড় টানা নৌকা চলাচলের সময় মেরুং ও মাইনী ছিল বিশ্রাম বা রাত্রিযাপনের স্থান। নৌকার মাঝি ও ব্যাপারীরা নৌকা নিয়ে যাওয়ার পথে নদীর পাড়ঘেঁষা পাহাড়ি গ্রামগুলো থেকে কৃষিপণ্য কিনতেন। আবার পাহাড়ি গ্রামের বাসিন্দারা বেশি দাম পাওয়ার আসায় প্রায়ই নিজেরা কৃষিপণ্য নৌকায় করে মেরুং বাজারে নিয়ে আসতেন। বিশেষ করে পাহাড়ি ২২টি গ্রামে নদীপথ ছাড়া যাতায়াতের আর কোনো মাধ্যম না থাকায় গ্রামের বাসিন্দারা তাঁদের উৎপাদিত পণ্য নৌকায় করে মেরুং বাজারেই নিয়ে আসেন। মূলত নদীপথে নৌকায় যাতায়াতের সময় পণ্য বিকিকিনির সূত্র থেকেই নৌকায় কৃষিপণ্য বিকিকিনির ঐতিহ্যবাহী এ হাট গড়ে ওঠে।

দূরপাহড় থেকে মেরুং বাজারে কৃষি পণ্য এনেছেন বিক্রেতারা

৪ মার্চ বৃহস্পতিবার হাটে গিয়ে দেখা গেল কৃষিপণ্য বিকিকিনি চলছে। নদীতে এখন নাব্যতা–সংকট। তবু বিভিন্ন এলাকা থেকে পাহাড়িরা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় কলা, আদা, হলুদসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছেন। নৌকায় পণ্য বিক্রি করার সময় কথা হয় চৌকাবাছড়া এলাকার মহারাজ চাকমার সঙ্গে। ৭২ বছর বয়সী মহারাজ বলেন, ‘আমি ১০ বছর বয়স থেকে বাবার সঙ্গে এ হাটে আসি। এ হাটে সব কৃষিপণ্য নৌকাতেই বেচাকেনা হয়। তাঁর পাশেই ছিলেন লতামালা চাকমা। তিনি বলেন, ‘আমরা এ হাটে পণ্য বিক্রি করে এক সপ্তাহের জন্য সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে নিয়ে যাই।’ এভাবেই সবার প্রয়োজন মিটিয়ে চলেছে এই ভাসমান হাট।

 

সূত্র-প্রথম আলো

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

আমাদের সাবস্ক্রাইব করুন
Please log in to share your opinion

Related Posts

আমাদের সাবস্ক্রাইব করুন