পর্যটকদের সিলেটের সাদা পাথরে অবস্থানের সময় বাড়ল দুই ঘণ্টা

ট্রাভেলগবিডি ডেস্ক

পাথর-জল আর পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পর্যটনকেন্দ্র সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের সীমান্তবর্তী সাদা পাথর এলাকায় পর্যটকদের যাতায়াত বেশি হয় গ্রীষ্মকালে। শীতকালে সেখানে যাতায়াতের সর্বশেষ সময়সীমা বিকেল চারটা পর্যন্ত বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। এই সময়সীমা গ্রীষ্মকালে দুই ঘণ্টা বাড়িয়ে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত করা হয়েছে।

২৬ শে ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে এ নির্দেশনা কার্যকর করতে সাদা পাথর নৌপথ অভিমুখে নির্দেশসংবলিত ব্যানার টানানো হয়েছে। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমন আচার্য বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) সদস্যদের নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে এ নির্দেশনা টানিয়েছেন।

ইউএনও সুমন আচার্য প্রথম আলোকে বলেন, আগামী শীতকাল আসার আগপর্যন্ত এ নির্দেশনা কার্যকর থাকবে। সাদা পাথর অভিমুখে পর্যটকবাহী নৌকা বিকেল চারটা পর্যন্ত রওনা করতে পারবে। আর সাদা পাথর এলাকায় যেসব নৌকা যাবে, সেখান থেকে সন্ধ্যা ছয়টার আগেই ফিরতে হবে। সীমান্ত এলাকার স্বার্থে এ নির্দেশনা বিজিবি পর্যবেক্ষণ করবে।

এর আগে গত বছরের ১৩ নভেম্বর শীতকালীন সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছিল। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রতিদিন বিকেল চারটার পর সাদা পাথর এলাকায় পর্যটকবাহী নৌকা চলাচল বন্ধ করা হয়েছিল। প্রায় তিন মাস শীতকাল শেষে নতুন নির্দেশনা কার্যকর করা হলো

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ধলাই নদের উৎসমুখে সাদা পাথর এলাকার অবস্থান। ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চল লুংলংপুঞ্জি ও শিলংয়ের চেরাপুঞ্জি, এপারে ধলাই নদের উৎসমুখের বিস্তৃত এলাকায় সারা বছর নদের পানি প্রবহমান থাকে। বৃষ্টিবহুল চেরাপুঞ্জির পাদদেশ থেকে বর্ষায় ঢলের পানির সঙ্গে পাহাড়ের পাথরখণ্ড এপারে নেমে আসে।

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর এলাকায় ধলাই নদের পানি কমেছে বেশ। দুই দিকে বিশাল এলাকাজুড়ে পাথর আর মধ্যখান দিয়ে বয়ে যাচ্ছে স্বচ্ছ পানি। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর এলাকায় ধলাই নদের পানি কমেছে বেশ। দুই দিকে বিশাল এলাকাজুড়ে পাথর আর মধ্যখান দিয়ে বয়ে যাচ্ছে স্বচ্ছ পানি।ছবি: আনিস মাহমুদ

২০১৭ সালে পাহাড়ি ঢলে পাথর জমা হওয়ায় কোম্পানীগঞ্জের তৎকালীন ইউএনও আবুল লাইছ পাথর সংরক্ষণ করেন। এ নিয়ে ২০১৭ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোয় ‘ধলাইমুখে আবার জমল ধলাসোনা’ শিরোনামে একটি সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হয়। সেই থেকে এলাকাটি ‘সাদা পাথর’ পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পায়।

সীমান্তের ওপারে পাহাড়, পাথর আর স্বচ্ছ জলের অবগাহনে বছরজুড়ে সাদা পাথর এলাকায় পর্যটকদের যাতায়াত থাকে। সড়কপথে ‘সাদা পাথর পরিবহন’ নামের একটি বাস সার্ভিস চালুর পর প্রতিদিন অন্তত তিন হাজার পর্যটকের আগমন ঘটে। এর মধ্যে শুক্র, শনিবারসহ ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকসংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এখানে ২ থেকে ৩ হাজার পর্যটকের আগমন ঘটে। গ্রীষ্মকালে এ সংখ্যা হয় দ্বিগুণ।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন বলেন, সাদা পাথর হিসেবে পর্যটক আকর্ষণের স্থানটিতে ১৯৯০ সালে পাহাড়ি ঢলে প্রথম পাথর জমা হয়। কিন্তু সেগুলো সংরক্ষণ না করায় তখন ব্যাপক লুটপাট হয়েছিল। দুই যুগের বেশি সময় পর ২০১৭ সালের বর্ষাকালে আবার পাথর জমা হলে এবার স্থানীয় মানুষজন পাথর লুটপাটের বিরুদ্ধে নামেন। জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করায় গোটা এলাকা পর্যটনকেন্দ্রে রূপ নিয়েছে। বিগত তিন বছরের বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঢলে জমা হওয়া পাথরের স্তূপ আরও বিস্তৃত হয়েছে। সেখানে যাতায়াতে সময়সূচি নির্ধারণ করায় নিরাপত্তাসহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ অনেকটা দূর হবে।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

আমাদের সাবস্ক্রাইব করুন
Please log in to share your opinion

Related Posts

আমাদের সাবস্ক্রাইব করুন