দ্বীপে আশার আলো ঝিনুকের তৈরি কৃত্রিম প্রাচীর 

শাহীদুল ইসলাম By শাহীদুল ইসলাম - 26 November, 2021


আশিক হাসান

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ আছড়ে পড়ছে সীমান্ত পেরিয়ে নানা দেশে। ঠিক এই সময়ে যখন কুতুবদিয়া দ্বীপ ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যাচ্ছে সাগরের প্রবল স্রোতে তখন দ্বীপ রক্ষায় আশা জাগানিয়া হিসেবে দেখা মিলেছে ঝিনুকের তৈরি কৃত্তিম প্রাচীর। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্স ইনস্টিটিউটের সহকারী গবেষক শাহ নেওয়াজ চৌধুরী ২০১২ সালে বিষয়টি নিয়ে প্রথমে বাংলাদেশের কুতুবদিয়া দ্বীপে কাজ করা শুরু করেন। তিনি এই পরিকল্পনাটি করেন মূলত আমেরিকার নর্থ ক্যারোলিনা আর নেদারল্যান্ডের ঝিনুকের কৃত্তিম প্রাচীরের সাফল্য থেকে। যেখানে এই ঝিনুকের কৃত্তিম প্রাচীর দিয়ে একদিকে যেমন সাগরের ঢেউ থেকে উপকূলের তটরেখাকে রক্ষা করা হয়েছে, অন্যদিকে এই ঝিনুকের কৃত্তিম প্রাচীরের মাধ্যমে প্রকৃতি এবং জলজ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে স্থানীয় মানুষের অন্ন সংস্থান করা হয়েছে। 

এই ঝিনুক থেকেই হবে কৃত্রিম প্রাচীর

 

পরীক্ষমূলকভাবে এই পদ্ধতি কুতুবদিয়া দ্বীপে প্রয়োগ করা হয় ২০১৪ সালে এবং এর ফলাফল ছিল অত্যন্ত আশাপ্রদ। কুতুবদিয়া দ্বীপে ধীরে ধীরে সাগরের জলে ভুমি ক্ষয় হচ্ছিল এবং অনেক পরিবার জমি হারিয়ে জীবিকার সন্ধানে এই দ্বীপ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের গবেষক শাহ নেওয়াজ চৌধুরীর পরিকল্পনা মোতাবেক কংক্রীটের তৈরি করা বিশালকার স্লাবের সাথে যখন ঝিনুকের এই কৃত্তিম প্রাচীর মিলে একটা কৃত্তিম প্রাচীর তৈরি করা হল পরীক্ষামূলকভাবে দেখা গেল সেই ঝিনুকের কৃত্তিম প্রাচীর খুব সফলভাবে একদিকে যেমন সাগরের তীব্র ঢেউকে গতিহীন করে দিচ্ছে, অন্যদিকে মাটি ক্ষয় রোধ করছে। আর সবচেয়ে ভাল বিষয় হচ্ছে এই ঝিনুক প্রাচীর তৈরির ফলে নদী থেকে বয়ে আসা প্রতিবছর টন টন পলিও জমা হচ্ছে এই প্রাচীরের একপাশে ফলে বাংলাদেশের নতুন নতুন ভূমি তৈরির একটা প্রত্যাশ দেখা দিচ্ছে। 


এছাড়াও এই কৃত্তিম ঝিনুক প্রাচীরের সাথে এসে ধীরে ধীরে বাসা বাধঁছে অসংখ্য প্রজাতির মাছ এবং জলজ প্রাণী। বিশেষ করে কাঁকড়া যার রয়েছে রপ্তানি মূল্য। ফলে কুতুবদিয়া দ্বীপে দেখা গেছে জেলেদের মাছ ধরতে প্রানের ঝুঁকি নিয়ে গভীর সমুদ্রে যেতে হয়না বরং এই কৃত্তিম ঝিনুক প্রাচীরের কাছে থেকেই তারা পাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এবং কাকঁড়া। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে এই প্রজেক্টের জন্য অর্থের যোগান না থাকায় এই প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া এই কৃত্তিম ঝিনুক প্রাচীর সম্পর্কে সঠিক তথ্য না জানার কারণে প্রতিবছর কুতুবদিয়া দ্বীপে এই প্রাচীর স্থানীয় জেলেদের ট্রলারের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। প্রতিটি দ্বীপে যদি এধরনের প্রকৃতিবান্ধব কৃত্তিম ঝিনুক প্রাচীর তৈরি করা যেত তাহলে একদিকে যেমন আমাদের উপকূল রক্ষা পেত অন্যদিকে জলজপ্রানীর অসাধারন পরিবেশ তৈরী করে বাংলাদেশ সরকার ট্যুরিজম থেকে আয় করতে পারত বিলিয়ন ডলার। যা দিয়ে কিনা এই প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষনসহ আরো নতুন এলাকা বৃদ্ধি করে স্থানীয় জনজীবনকে সমৃদ্ধশালী করা সম্ভব।

প্রাচীর

একজন পর্যটক হিসেবে যখনই আমরা এরকম কোন দ্বীপে ভ্রমণ করব যেখানে আছে এই ধরনের প্রাকৃতিক অথবা কৃত্তিম ঝিনুক প্রাচীর, আমরা চেষ্টা করব যেন আমাদের কারণে প্রাকৃতিক অথবা কৃত্তিম ঝিনুক প্রাচীরের কোন ক্ষতি না হয়। বিশেষ করে আমাদের ড্রইং বা লিভিংরুমের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য সরকারিভাবে বৈধ উৎস ছাড়া অন্য কোন উৎস থেকে আমরা কখনোই কোন প্রবালের অথবা ঝিনুকের কিছু কিনবো না। আসুন একজন পর্যটক হিসেবে আমাদের চারপাশের প্রকৃতি সম্পর্কে সঠিক ধারনা লাভ করি এবং ভ্রমণের সময় দেশ কিংবা বিদেশ হউক চারপাশের পরিবেশকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং সুন্দর রাখি।


সূত্র: 'The unlikely protector against Bangladesh's rising seas' লেখার আলোকে

    

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

আমাদের সাবস্ক্রাইব করুন
Please log in to share your opinion

Related Posts

আমাদের সাবস্ক্রাইব করুন