একদিনের ময়মনসিংহ ভ্রমণে যা যা দেখবেন

বাংলাদেশের প্রায় সব জেলাতেই বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান আছে। যদিও ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বান্দরবান, কক্সবাজার, সিলেট, রাঙামাটিতেই বেশিরভাগ পর্যটকরা ভিড় করেন।

তবে জানেন কি, আপনার আশপাশের বিভিন্ন জেলাতেও আছে বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র। অনেকেই একদিনের টুরে ঢাকার অদূরে ঘুরতে যেতে চান। তারা চাইলেই যেতে পারেন ময়মনসিংহে।

এর মধ্যে মুক্তাগাছার রাজবাড়ি, আলেকজান্দ্রা ক্যাসল, শশী লজ, সিলভার প্যালেস, রামগোপালপুর জমিদার বাড়ি ও গৌরীপুর রাজবাড়ী বিশেষভাবে জনপ্রিয়।

এ ছাড়াও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ জাদুঘর, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা, পুরোনো ব্রহ্মপুত্র নদী, বিপিন পার্ক, বোটানিকেল গার্ডেন ইত্যাদি পর্যটকদের কাছে সমানভাবে জনপ্রিয়।

jagonews24

ময়মনসিংহ ভ্রমণে গেলে মুক্তাগাছার মণ্ডা খেতে ভুলবেন না। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক একদিনের টুরে ময়মনসিংহের কোন কোন স্থান ভ্রমণ করবেন-

শশীলজ

ময়মনসিংহ শহরের ব্রহ্মপুত্র ব্রিজ বাস স্ট্যান্ড এলাকা থেকে শশীলজে যেতে পারবেন। এজন্য সেখান থেকে রিকশা বা অটো নিন। তার ১০ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে যাবেন স্থানীয়ভাবে ময়মনসিংহ রাজবাড়ি নামে পরিচিত শশীলজে।

সেখানকার প্রধান ফটক পেরিয়ে প্রবেশ করলে মূল ভবনের সামনে চোখে পড়বে চমৎকার বাগান। বাগানের মাঝখানে শ্বেতপাথরের ফোয়ারার োথে গ্রিক দেবী ভেনাসের পাথরের মূর্তিও আছে।

মূল ভবনের দোতলা স্নানঘর, পুকুর ও মার্বেল পাথরে নির্মিত ঘাট। সাথে করা হয়েছে। ২০১৫ সালে ৪ এপ্রিল জাদুঘর স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর শশী লজটি অধিগ্রহণ করে।

jagonews24

আলেকজান্ডার ক্যাসেল

শশীলজের খুব কাছে অর্থাৎ মাত্র ৫ মিনিটের দূরত্বেই আছে আরও এক দর্শনীয় স্থান আলেকজান্ডার ক্যাসেল। টিচার্স ট্রেনিং কলেজের গ্রন্থাগার হিসেবে ব্যবহৃত আলেকজান্ডার ক্যাসেলে পায়ে হেঁটে পৌঁছাতে মিনিট দশেক সময় লাগে।

‘লোহার কুঠি’ খ্যাত এই আলেকজান্ডার ক্যাসেলে নাকি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মহাত্মা গান্ধী, নবাব সলিমুল্লাহ, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, লর্ড কার্জনসহ বরেণ্য ব্যক্তিরা অতিথি হিসেবে রাত কাটিয়েছেন এই ক্যাসেলে।

এই ক্যাসলের পেছনে আছে দুটি অশ্বথ গাছ। জানা যায়, এই ক্যাসলে অবস্থানকালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অম্বথ গাছের ছায়ায় বসে সময় কাটাতেন। বর্তমানে আলেকজান্ডার ক্যাসলের ৮ ঘরে প্রায় ১৫ হাজার বই রাখা আছে।

আলেকজান্ডার ক্যাসল থেকে বেড়িয়ে দুপুরের খাবার খেতে পারেন। এজন্য থানা ঘাটে সেলিম হোটেলে চলে যেতে পারেন। সেলিম হোটেলে সুলভ মূল্যে দেশি খাবার পাওয়া যায়।

jagonews24

কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

ময়মনসিংহ শহর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়টি। প্রায় ১২০০ একর জায়গা নিয়ে এটি অবস্থিত। তাই কারও পক্ষেই একদিনের মধ্যে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ঘুরে দেখা সম্ভব নয়।

তবে পর্যটকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলের বাগান, বৈশাখী চত্বর, লিচু ও আম বাগান, সবুজ মাঠ, লেক, ফিস মিউজিয়াম, কৃষি মিউজিয়াম, সেন্ট্রাল মসজিদ, বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত, মাছ চাষের পুকুর, গবাদী পশুর খামার, নান্দনিক সড়ক, বিশ্ববিদ্যালয় রেলওয়ে স্টেশন ও বিভিন্ন দর্শনীয় ভাস্কর্য ঘুরে দেখতে পারেন কম সময়েই।

জয়নুল আবেদিন পার্ক

নদীর তীরের চমৎকার পরিবেশে অবস্থিত জয়নুল আবেদিন পার্ক। বিনোদনের জন্য এই পার্কে আছে ফোয়ারা, দোলনা, ট্রেন, ম্যাজিক নৌকা, মিনি চিড়িয়াখানা, বৈশাখী মঞ্চ, ঘোড়ার গাড়ি, চরকি ও বিভিন্ন খাবারের দোকান।

jagonews24

যারা নদীর বুকে ভাসতে চান, তাদের জন্য সারি সারি নৌকার ব্যবস্থাও আছে। এই পার্কের অন্য প্রান্তে আছে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা। ২০ টাকার টিকিট কেটে সংগ্রহশালাটি ঘুরে দেখতে পারেন।

মুক্তাগাছা রাজবাড়ি

ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা জমিদার বাড়িটি সবার কাছে পরিচিত। অনেকে হয়তো এরই মধ্যেই ঘুরে এসেছেন সেখান থেকে। এটি মুক্তাগাছা রাজবাড়ি নামেও পরিচিত। ময়মনসিংহ শহর থেকে এই জমিদার বাড়ির দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার। টাঙ্গাইলগামী বাসে করে ৩০-৪০ টাকা ভাড়ায় মুক্তাগাছা যাওয়া যায়।

এ ছাড়াও ময়মনসিংহের টাউন হলের সামনে থেকে লোকালে বা সিএনজি রিজার্ভ নিয়েও মুক্তাগাছা থেকে ঘুরে আসতে পারবেন। লোকাল সিএনজি ভাড়া ৪০-৪৫ টাকা। আর রিজার্ভে ২০০-২৫০ টাকা। মুক্তাগাছা যেতে ৪০-৫০ মিনিট সময় লাগে।

সেখানে নেমে রিকশায় করে কিংবা সামান্য হাঁটলেই পৌঁছে যাবেন মুক্তাগাছা জমিদার বাড়িতে। জমিদার বাড়ির সামনেই আছে ১৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী গোঁপাল পালের মণ্ডার দোকান। এই মিষ্টান্ন খেয়ে আসতে ভুলবেন না।

ফেরার পথে মুক্তাগাছা থেকে লেগুনা, সিএনজি কিংবা বাস দিয়ে পুনরায় ময়মনসিংহ শহরে যেতে হবে। ময়মনসিংহের মাসকান্দা বাস স্ট্যান্ড থেকে এনা, শৌখিন, শামীম পরিবহন, আলম এশিয়া, শ্যামলী বাংলা অথবা ইমাম পরিবহণের বাসে করে ২-৩ ঘণ্টার মধ্যেই ঢাকায় ফিরতে পারবেন।

ময়মনসিংহ যাওয়ার উপায়

ঢাকার মহাখালী থেকে এনা পরিবহণের বাসে ২২০ টাকা ভাড়ায় প্রায় আড়াই থেকে তিন ঘন্টায় ময়মনসিংহ জেলা শহরে পৌঁছাতে পারবেন। এনা পরিবহণ ছাড়াও ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ রুটে শৌখিন, শামীম পরিবহন, আলম এশিয়া, শ্যামলী বাংলা এবং ইমাম পরিবহণের বাস চলাচল করে। ঢাকা হতে ময়মনসিংহে আসা বাসগুলো মাসকান্দা বাস স্ট্যান্ড এসে থামে।

ঢাকা থেকে ট্রেনে চড়ে ময়মনসিংহ যেতে চাইলে কমলাপুর কিংবা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন হতে সকাল ৭ টা ২০ মিনিটে তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনে যাত্রা করলে সকাল ১১টার আগেই ময়মনসিংহে পৌঁছাতে পারবেন।

শ্রেণিভেদে জনপ্রতি ট্রেনের টিকিটের মূল্য ১৪০ থেকে ২৫০ টাকা। ঢাকা ছাড়া অন্যকোন জেলা থেকে ময়মনসিংহ যেতে চাইলে আপনার সুবিধামত যানবাহনে এমনভাবে যান যেন সকালের ভিতর আপনি ময়মনসিংহ শহরে চলে আসতে পারেন।

 

সোর্স-জাগো নিউজ 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

আমাদের সাবস্ক্রাইব করুন
Please log in to share your opinion

Related Posts

আমাদের সাবস্ক্রাইব করুন