এইচবিও টিভি চ্যানেলে প্রচারিত সাড়া জাগানো সিরিয়াল ‘গেম অব থ্রোনস’ যারা দেখেছেন তারা সকলেই জানেন ‘আয়রন থ্রোন’ কী। তবে যারা এই সিরিয়ালটি দেখেননি তাদের জন্য বলে রাখা ভালো, ‘আয়রন থ্রোন’ হচ্ছে এমন একটি সিংহাসন যেটি নিয়ে ‘গেম অব থ্রোনস’-এ কয়েকটি গোষ্ঠীর মধ্যে প্রতিনিয়ত লড়াই চলছে। সিরিয়ালের ‘আয়রন থ্রোন’টি তৈরি করা হয়েছে এক হাজার তলোয়ার দিয়ে।তবে এবার আর টিভি পর্দায় নয় বাস্তবেই এক ভাস্কর্যের দেখা মিলেছে যেটি তৈরি করা হয়েছে ১ লাখ ছুরি ব্যবহার করে। আর ছুরিগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে ৪৩টি পুলিশ স্টেশন থেকে। পুলিশ জানিয়েছে, অধিকাংশ ছুরিগুলো বিভিন্ন অভিযানে উদ্ধার করা। অপরাধীরা বিভিন্ন সময় এইসব ছুরি ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ করেছেন এবং পুলিশ তাদের পাকড়াও করার সময় সেগুলো উদ্ধার করেছে। তবে কিছু ছুরি অপরাধীরা স্বেচ্ছায় পুলিশের কাছে জমা দিয়েছে। ভাস্কর্যটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘নাইফ অ্যাঞ্জেল’। ২৪ ফুট উচ্চতার এই আজব ভাস্কর্যটি তৈরি করেছে বৃটিশ আয়রন ওয়ার্ক সেন্টারের শিল্পী আলফে ব্র্যাডলে। কিন্তু এত এত উপকরণ থাকতে ছুরি ব্যবহার করে কেন এমন একটি আজব ভাস্কর্য বানালেন তারা? গার্ডিয়ান পত্রিকার করা এমন এক প্রশ্নের জবাবে বৃটিশ আয়রন সেন্টারের পরিচালক ক্লিভ নোলেজ বলেন, ‘গত কয়েক বছরে সারা বৃটেনজুড়ে ছুরি ব্যবহার করে খুন-জখমসহ নানা ধরনের অপরাধ করার প্রবণতা বেড়েই চলেছে। বছর দুয়েক আগে একটি টেলিভিশন চ্যানেলে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দেখেনো হয়। মূলত ওই প্রতিবেদন থেকেই আমরা ভাস্কর্যটি তৈরিতে উৎসাহিত হই।’তিনি আরো বলেন, ‘ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য নয়, ছুরির ব্যবহার সংক্রান্ত অপরাধ দিনে দিনে কীভাবে বৃটিশ সমাজে বেড়ে চলেছে তা দেখাতেই এই ভাস্কর্যটি তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়।’দুই বছর টানা পরিশ্রমের পর ভাস্কর্যটির কাজ,২০১৭ সালে শেষ হয়। তবে ভাস্কর্যটি তৈরির এক পর্যায়ে কাজ শেষ না হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। কারণ এক বছর কাজ চলার পর ৪৩টির মধ্যে ৬টি পুলিশ স্টেশন তাদের ছুরি দিতে অস্বীকৃতি জানায়। প্রতিবাদস্বরুপ আয়রন সেন্টার তাদের কাজ বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও পরে ৪৩টির মধ্যে ৪১টি স্টেশনের সাথে সমঝোতার মাধ্যমে কাজটি শেষ হয়।এ সম্পর্কে শ্রোপশায়ার স্টারকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ক্লিভ নোলেজ বলেন, ‘আমি অবাক হয়ে যাই, কীভাবে পুলিশ এরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কারণ গোটা বৃটেন জুড়েই খুন-জখম বেড়েই চলেছে। আর আমরা এটি তৈরি করছি জনসচেতনতা বাড়াতে।’বছর দুয়েক আগে যখন ‘নাইফ অ্যাঞ্জেল তৈরি করার ঘোষণা দেয়া হয় তখন গোটা বৃটেন জুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল। এখন সেই প্রতিক্রিয়া বিতর্কে রূপ নিয়েছে। কিছু কিছু ভুক্তভোগী পরিবার এর তীব্র বিরোধিতা করছে।এর মধ্যে সেরিল ইভান্স নামের এক মহিলা যার আঠারো বছর বয়সি সন্তানকে ২০০৪ সালে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছিল, তিনি বলেন, ‘অ্যাঞ্জেল হচ্ছে শুদ্ধতার প্রতীক অন্যদিকে ছুরি হচ্ছে অশুভর প্রতীক যা অনেক তরুণের জীবন কেড়ে নিয়েছে।’ তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, শুদ্ধতা ও অশুভ এই দুয়ে মিলে কী করে একটি শুদ্ধতার প্রতীক অ্যাঞ্জেল হতে পারে? তিনি আরো বলেন, ‘যারা সন্তান হারাননি তারা কী করে বুঝবেন এর যন্ত্রণা কতটা তীব্র।’সমাজের একটা অংশের এই সমালোচনা সম্পর্কে ক্লিভ নোলেজ বলেন, ‘আমরা আগে থেকেই জানতাম যেহেতু এটি একটি শিল্পকর্ম, সেহেতু এটি নিয়ে কিছু সমালোচনা হবে। তবে এটি এমন একটি শিল্পকর্ম যার প্রসারিত দুই হাত জানান দিবে, কেন এমন হচ্ছে?’কাজ শেষ হওয়ার পরের বছর জনসচেতনতা বাড়াতে ‘নাইফ অ্যাঞ্জেল’ বৃটেন ভ্রমণে বের হয়। গোটা দেশ ভ্রমণ শেষে ভুক্তভোগী মানুষদের উৎসর্গ করে ভাস্কর্যটি ট্রাফালগার স্কয়ারে স্থাপন করা হয়।