হাতি আর গরুতে টানা ট্রেন

হোসাইন জাকি ইঞ্জিন নয়, হাতি আর গরুর সাহায্যে চলত ট্রেন। অবাক করার মতো ব্যাপার হলেও এটাই সত্যি। ১৮৬৯ সালে কলকাতা থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত চলত এই ট্রেন। নাম ছিল বুলক ট্রেন। বার্ড নামে একটা কোম্পানি এই ট্রেন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করতো। কোম্পানির প্রধান ছিলেন স্যাম বার্ড। বলদের সাহায্যে তিনি এই মালবাহী ট্রেন পরিচালনা করতেন। বলদের ইংরেজি শব্দ বুলক থেকেই এই ট্রেনের নামকরণ করা হয়। [caption id="attachment_5906" align="aligncenter" width="700"] হাতিতে টানছে ট্রেনেরবগি[/caption] এই ট্রেনে কোন যাত্রী থাকতো না। দার্জিলিং মেল বা টয় ট্রেন তখনো চালু হয়নি। মূলত ব্রিটিশ সাহেবদের পরিচালিত চা বাগান থেকে পণ্য পরিবহনের জন্যই ট্রেনটি ব্যবহার হতো। সাহেবগঞ্জ থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত চলত এই ট্রেন। মোট ১৮৮ মাইলের যাত্রাপথ। পণ্য উঠা-নামার জন্য এই ট্রেন বিভিন্ন স্থানে দাঁড়াত। ট্রেনের কামরাগুলো ছিল কাঠের তৈরি। দেখতে বাক্সের মতো। দুইপাশে দুটি চাকা। কামরার মাথায় থাকত ত্রিপলের ছাউনি। দুটি বলদ কামরাগুলো টেনে নিয়ে যেত। সেখানে কিন্তু কোনও রেল লাইন ছিল না। কোনও বলদ অসুস্থ হলে আরও বলদ প্রস্তুত থাকত স্টেশনে স্টেশনে। পাশাপাশি তাদের খাবারও মজুত থাকতো। বর্ষাকালে বলদের পরিবর্তে হাতির ব্যবহার হতো এই ট্রেনে। কথিত আছে, তেরশত টাকা দিয়ে বার্ড কোম্পানি একটি হাতি কিনেছিল। অন্য হাতিগুলো ছিল ভাড়ায় আনা। সেগুলোর প্রত্যেকটির জন্য মাসে ২০০ টাকা ভাড়া গুণতে হতো। ট্রেন পাহারা দেওয়ার জন্য লাঠিধারী চাপরাসীরও ব্যবস্থা ছিল। ১৮৮১ সাল পর্যন্ত বুলক ট্রেনের এই পরিষেবা চালু থাকে। অবশেষে বার্ড কোম্পানি ২০ হাজার টাকায় তাদের সব সামগ্রী দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের নিকট বিক্রি করে দেয়। ভারতবর্ষের বুক থেকে হারিয়ে যায় বুলক ট্রেন। শুরু হয়, দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের যাত্রা।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

আমাদের সাবস্ক্রাইব করুন
Please log in to share your opinion

Related Posts

আমাদের সাবস্ক্রাইব করুন