স্মৃতি সুধার আম্রকানন

সানজিদা দীবা

বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ভ্রমণ স্থানগুলোর মধ্যে মেহেরপুরের মুজিবনগর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। বাংলাদেশের পশ্চিম সীমান্তবর্তী ঐতিহাসিক এই জায়গাটির পূর্ব নাম বৈদ্যনাথতলা। বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকারের রাজধানী ছিল এখানে। এখানে এই আম্রকাননে শপথ নিয়েছিল বাংলাদেশের প্রথম প্রবাসী সরকার। এই আম্রকানন উদিত হয়েছিল অস্তমিত স্বাধীনতার সূর্য। এর মাটির নিবিড়তায় জড়িয়ে রয়েছে বাংলাদেশের জন্মকথা। স্বাধীন বাংলাদেশের বিজয় পতাকাও প্রথমবারের মত উড়িয়েছিল এই গ্রামেরই কতিপয় মাটির মানুষের হাতে।

ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, আম বাগানের মালিক ছিলেন জমিদার বৈদ্যনাথবাবু। সে কারণেই এই স্থানটির নাম বৈদ্যনাথতলা হিসেবে পরিচিতি ছিল। স্বাধীনতার পর জায়গাটির নাম পাল্টে মুজিবনগর রাখা হয়। বাংলাদেশের প্রথম রাজধানীর ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখানে গড়ে তোলা হয়েছে মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স। বর্তমানে এটি মেহেরপুর জেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান।

স্মৃতিসুধার আম্রকানন

৬৬ একরের বিশাল নান্দনিক এই কমপ্লেক্সটিতে একটি জাদুঘর, স্মৃতিসৌধ, ছোট-বড় অসংখ্য ভাস্কর্য, মিলনায়তন, স্বাধীনতা ক্লাব, পাঠাগার, রেস্টহাউজ, হেলিপ্যাড, পিকনিক স্পটসহ নানা সুযোগসুবিধা রয়েছে। এখানকার অন্যতম দর্শনীয় স্থাপনা হচ্ছে বিশাল আয়তনের বাংলাদেশের মানচিত্র। ওয়াচ টাওয়ার কিংবা মূল কমপ্লেক্সের করিডরে দাঁড়ালে এই মানচিত্রের পুরোটা দেখা যায়।  জাদুঘরে মুক্তিযুদ্ধের নানা ঘটনাকে আলোকচিত্রের মাধ্যমে জীবন্ত করে রাখা হয়েছে। এছাড়া জাতীয় নেতাদের তৈলচিত্রও এখানে রাখা আছে।

 মানচিত্র

মূল কমপ্লেক্সের বাইরের অংশে ভাস্কর্যের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ছয় দফার প্রতীকি গোলাপ বাগান, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, অস্থায়ী সরকারের শপথ গ্রহণ, হানাদার বাহিনীর আত্মসমার্পণের দৃশ্য, মুক্তিযোদ্ধারদের ভাস্কর্য। ছোট-বড় এই ভাস্কর্যগুলো যেন চোখের সামনে মেলে ধরে বাঙালীর রক্তাক্ত স্বাধীনতার ইতিহাস।

 হানাদার বাহিনীর আত্মসমার্পণের দৃশ্য

মুক্তিযুদ্ধকালীন অস্থায়ী সরকার যেখানে গঠিত হয় সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে একটি স্মৃতিসৌধ। প্রায় ২০ একর জমির উপর ১৬০ ফুট ব্যাসের গোলাকার এই স্মৃতিসৌধটির স্থাপতি তানভীর করিম। স্মৃতিসৌধের বিভিন্ন অংশের মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। আমাদের স্বাধীনতার রক্তাক্ত পথ পরিক্রমা ও ঘটনাপঞ্জি জানতে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ পা রাখেন স্মৃতির আম্রকাননে।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

আমাদের সাবস্ক্রাইব করুন
Please log in to share your opinion

Related Posts

আমাদের সাবস্ক্রাইব করুন