আবদুল্লাহ আল মোহন
দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ শ্রীমঙ্গল। চা শিল্পের জন্য দুনিয়াজুড়ে খ্যাত। চায়ের রাজধানী বলা হয়ে থাকে শ্রীমঙ্গলকে। রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় দুশো কিলোমিটার দূরত্বে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে প্রকৃতির আদুরে কন্যা, সুবিশাল পাহাড়ের পাদদেশে উপজেলা শ্রীমঙ্গলের অবস্থান। পাহাড়, অরণ্য, হাওর আর সবুজ চা বাগান ঘেরা নয়নাভিরাম প্রাকৃতিকদৃশ্য আর অপূর্ব সৌন্দর্যমন্ডিত নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি শ্রীমঙ্গল। সেই শ্রীমঙ্গলের অসাধারণ নৈসর্গিক পরিবেশের অনন্য স্বপ্নবিলাসী বালিশিরা রিসোর্ট।
পাহাড়, বন ও চা বাগানের কোলে অবস্থিত বালিশিরা রিসোর্ট মন কাড়বে পর্যটকদের। শ্রীমঙ্গলের রাধানগরে গ্র্যান্ড সুলতানের খুব কাছেই বালিশিরা। উদ্দাম উচ্ছল ঝরনা বয়ে যাচ্ছে বাংলোর পাশদিয়েই। রাতে দেখা যাবে তারামন্ডলী। রিসোর্টটি এমনভাবে সাজানো হয়েছে যাতে পর্যটকরা খুব সহজেই বন, পাহাড় ও প্রাকৃতিক প্রবাহের (শিরা) সৌন্দর্য অনুভব করতে পারেন। অতিথিরা প্রতিটি কটেজ থেকে অপরূপ প্রকৃতি এবং বৃষ্টির সৌন্দর্য দারুণভাবে উপভোগ করতে পারবেন। শিশুদের খেলার মাঠ, লং টেনিস, ব্যাডমিন্টন, সুইমিংপুল, টেবিল টেনিস, ওপেন এয়ার মিউজিক, হলরুম, ব্যক্তিগত সুইমিংপুল, রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি ভ্রমণপ্রেমিদের আনন্দিত করবে।
প্রকৃতির সুরম্য নিকেতন শ্রীমঙ্গলে দেখার আছে অসংখ্য চা বাগান, চা প্রক্রিয়াজাত কেন্দ্র, লাউয়াছড়া রেইন ফরেস্ট, মাগুরছড়া গ্যাসকূপ, চা গবেষণাকেন্দ্র, লাউয়াছড়া ইন্সপেকশন বাংলো, খাসিয়াপুঞ্জি, মণিপুরীপাড়া, ডিনস্টন সিমেট্রি, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান নির্মাই শিববাড়ি, টি-রিসোর্ট, ভাড়াউড়া লেক, পাহাড়িঝর্ণা, চারদিকে প্রকৃতির নজরকাড়া সৌন্দর্য্য আর হাজারো প্রজাতির গাছ-গাছালি। শ্রীমঙ্গলের পাদদেশে অবস্থিত এককালে বৃহত্তর সিলেটের মৎস্য ভান্ডার বলে খ্যাত ‘হাইল-হাওর’ এবং শীতের শুরুতে সাত-সমুদ্র-তেরো-নদী পার হয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে আসা অতিথি পাখি। বিস্তীর্ণ পাহাড়ি অঞ্চলে বাসরত স্বতন্ত্র স্বত্বার উপজাতি জনগোষ্ঠী খাসিয়া, মণিপুরী, টিপরা ও গারোদের জীবনাচার, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের কারণেও এ অঞ্চলের নাম অনেকের কাছে সুপরিচিত। তাছাড়াও চা, রাবার, লেবু, পান, আনারস ও মূল্যবান কাঠ ইত্যাদি নানা কারণে শ্রীমঙ্গলের প্রসিদ্ধি রয়েছে সর্বত্র।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি শীতপ্রধানঅঞ্চল, সবচেয়ে বৃষ্টিপ্রধান অঞ্চল হিসেবেও শ্রীমঙ্গল। বৃষ্টিতে ভিজতে কিংবা কনকনে শীত অনুভব করতে আপনি দুই মৌসুমেই শ্রীমঙ্গল বেড়াতে আসতে পারেন। স্বপ্নবিলাসী বালিশিরা রিসোর্ট হতে পারে আপনার ভ্রমণপিপাসু মনের আনন্দ সহচর। বালিশিরা রিসোর্টের সবুজগাছপালা, প্রাকৃতিকপ্রবাহ ও লতাপাতায় ঘেরা ১১টি কটেজের প্রতিটি প্রিয় কবি, লেখক ও কথাসাহিত্যিকের প্রিয় বইগুলোর প্রচ্ছদ অনুযায়ী নামকরণ করা হয়েছে। মাধুকরী, অরণ্যের দিনরাত্রি, ঝরাপালক, নীলকন্ঠ পাখির খোঁজে, শেষের কবিতা, অগ্নিবীণা, এইসব দিনরাত্রি, লাল-নীল দীপাবলী, সোনালীকাবিন, কালবেলা, গায়ত্রী সন্ধ্যা ইত্যাদি।
ধামরাইয়ের মৃৎশিল্পী গোবিন্দপাল উপন্যাস বা কাব্যগ্রন্থের নামে টেরাকোটার ডিজাইন করেছেন। টেরাকোটার ডিজাইনের নিচে রয়েছে সেই লেখক, কবি অথবা কথাসাহিত্যিক তাঁদের উল্লেখযোগ্য বইয়ের সংগ্রহশালা। যা অবসরে অতিথিদের নির্মল সময় কাটাতে সাহায্য করবে; সমৃদ্ধ হবে সাহিত্যজ্ঞানে আমাদের প্রযুক্তিনির্ভর প্রজন্ম ।