ট্রাভেলগবিডি ডেস্ক
জন্মের পর থেকেই অভিযানের কাহিনী, দেশ আবিষ্কারের কাহিনী আমরা পড়েছি। কিন্তু নতুন নতুন দেশ জয়ের অভিযান আগেও যেমন ছিল এখনও তেমনি আছে। কলম্বাসের আমেরিকা আবিষ্কারের গল্প শুনলে আমাদের পিলে চমকায়। ইবনে বতুতা বা ভাস্কো দা গামা তাদের অভিযান অভিজ্ঞতা আমাদের জন্য লিখে গেছেন। সেইসব রোমাঞ্চকর গল্প আজ ইতিহাস। কিন্তু সেখানেই থেমে নেয় অভিযান। দেশজয়ের অভিযান আগেও যেমন চলেছে, এখনও চলছে। কিন্তু ভ্রমণের অনেক অজানা ইতিহাস লেখা হয়নি। যাদের লেখনি সাহিত্যে অমূল্য সম্পদ হয়ে আছে তেমন কিছু মানুষের বই নিয়ে আমাদের আজকের এই রচনা। খ্যাতনামা সাহিত্যিক, ছাড়াকার অন্নদাশঙ্কর রায় বলেছেন, ভ্রমণ থেকেই হয় ভ্রমণ কাহিনী। কিন্তু ভ্রমণকারীদের সকলের হাত দিয়ে নয়। ভ্রমণ সাহিত্য নিয়ে এ কথাটি ধ্রুব সত্য। না হলে বোধকরি পৃথিবীর ইতিহাসে সবচে বেশি লেখা হতো ভ্রমণের বই। কিন্ত তা তো হয়নি। অন্তত এ থেকে বোঝা যায় অসংখ্য ভ্রমণের গল্প কালের ধুলোয় হারিয়ে গেছে। আর যারাই বা লিখেছেন অনেকের লেখা হয়তো আলোর মুখ দেখেনি।
তবু যে কজন লেখকের ভ্রমণ সাহিত্য আলোচনায় এসেছে; সাহিত্যে চিরায়ত মর্যাদা পেয়েছে এমন কিছু বইয়ের আলোচনা এখানে উপজীব্য। প্রকৃত পক্ষে ভ্রমণ সাহিত্য এমন হতে হবে যে ভ্রমণ না করেও আপনি শুধুমাত্র কল্পনায় ভ্রমণ করতে পারবেন ভ্রমণ সাহিত্য পড়ে। ভ্রমণ সাহিত্য পড়ে আপনি কল্পনায় ঘুরে বেড়াতে পারবেন হিমালয়ের শিখরে। আমাজনের গহীন জঙ্গলে। তারা ভরা আকাশের নিচে, দিগন্ত বিস্তৃত কোন এক মরু প্রান্তরে কিংবা এন্টার্কটিকার হিমশীতল বরফের রাজ্যে। বাংলা সাহিত্যে ভ্রমণ নিয়ে অনেকেই লিখেছেন। তার মধ্যে থেকে কিছু রচনা পাঠকের মনে দাগ কাটছে বছরের পর বছর।
ট্রাভেলগবিডি পাঠকদের জন্য বাংলা সাহিত্যের ভান্ডার থেকে জনপ্রিয় কিছু জনপ্রিয় ভ্রমণ সাহিত্যের বইয়ের নাম এখানে উল্লেখ না করলেই নয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের য়ুরোপ প্রবাসীর পত্র, রাশিয়ার চিঠি, জাপান যাত্রী, জাভা যাত্রীর পত্র এদের মধ্যে অন্যতম। এছাড়াও চিরায়ত লেখকদের মধ্যে রয়েছে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের চাঁদের পাহাড়, সৈয়দ মুজতবা আলীর দেশে বিদেশে, সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পালামৌ। ভ্রমণ নিয়ে এরকম সুলিখিত একটি বইয়ের তালিকা ট্রাভেলগবিডি’র পাঠকদের জন্য উল্লেখ করা হলোঃ বিলাতে সাড়ে সাত’শ দিন (মুহম্মাদ আব্দুল হাই), সোভিয়েতে দিনগুলি (বেগম সুফিয়া কামাল), প্রেম যেখানে সর্বস্ব (সৈয়দ আলী আহসান), তুরস্ক ভ্রমণ (ইসমাইল হোসেন সিরাজী), বুলগেরিয়া ভ্রমণ (ড. মুহাম্মদ এনামুল হক), দৃষ্টিপাত (বিনয় মুখোপাধ্যায়; যাযাবর নামেই পরিচিত), ইস্তাম্বুল যাত্রীর পত্র (ইব্রাহীম খাঁ), পেশোয়ার থেকে তাসখন্দ (শহীদুল্লাহ কায়সার), চলে মুসাফির (পল্লীকবি জসিমউদ্দিন), হলদে পীরের দেশে (পল্লীকবি জসিমউদ্দিন)।
যে দেশে মানুষ বড় (পল্লীকবি জসিমউদ্দিন), দ্বিতীয় পৃথিবীতে (আ.ন.ম বজলুর রশীদ), মরুতীর্থ হিংলাজ (অবধূত), মহাপ্রস্থানের পথে (প্রবোধ কুমার সান্যাল), শ্রীকান্ত (শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়), দুরাকাঙ্খের বৃথা ভ্রমণ (কৃষ্ণকমল ভট্টাচার্য), হিমালয় (জলধর সেন), ইংলান্ডের ডায়েরি (শিবনাথ শাস্ত্রী), জাপানে (অন্নদাশঙ্কর রায়), পথে প্রবাসে (অন্নদাশঙ্কর রায়), জাপানি জার্নাল (বুদ্ধদেব বসু), সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতার জন্য সারা পৃথিবী, তিন সমুদ্র সাতাশ নদী, ছবির দেশে কবিতার দেশে, নবনীতা দেবসেনের করুণা তোমার কোন পথ দিয়ে, হে পূর্ণ তব চরণের কাছে, ট্রাকবাহনে ম্যাকমোহনে। বিক্রমণ নায়ারের পশ্চিম দিগন্তে, প্রদেশকালে, দুই ইউরোপের দিনলিপি, পরিব্রাজক (স্বামী সারদানন্দ; সংকলন), জিম্বাবুয়ের বোবা পাথর সালনিনি (মঈনুস সুলতান), অন্য পৃথিবী (ফজল শামসুজ্জামান), বন্দর থেকে বন্দরে (সানাউল হক) ও সাত সাঁতার (জহুরুল হক)।
আপনার ভ্রমণকে অনেক বেশি আনন্দময় করতে আজই সংগ্রহ করে ফেলুন বইগুলো। আর সেইসব লেখকের অনুসন্ধানী চোখের বিবরণ ও নিজের কল্পনা মিশিয়ে ঘুরে আসুন দুনিয়া।