নিজামের মিষ্টি ‘মাওয়া মিষ্টি’

আরিফুল রাজিব

কুমিল্লার রসমালাই, নাটোরের কাঁচাগোল্লা, নেত্রকোনার বালিশ মিষ্টি, যশোরের জামতলার মিষ্টি, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার মন্ডা এগুলোর মতো ঢাকার পাশে মানিকগঞ্জে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী নিজামের মিষ্টি। নিজামের মিষ্টি পাওয়া যায় মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর উপজেলার তেরশ্রী বাজারে। তাই এটি অনেকের কাছে তেরশ্রীর মিষ্টি নামেও পরিচিত। নিজামের মিষ্টির জনপ্রিয়তা মানিকগঞ্জের সীমানা পেরিয়ে ঢাকাসহ আশেপাশের জেলা পর্যন্ত বিস্তৃত। এবার একেবারে ব্যক্তিগত কাজে মানিকগঞ্জ গেলেও নিজামের মিষ্টি চেখে দেখার ভাবনাটা মাথার মধ্যে কেবলই ঘুরপাক খাচ্ছিল। তাই কাজের ফাঁকে ছুটে যাই নিজামের মিষ্টির স্বাদ নিতে।

লেখক

অনেক দিন আগের কথা। নিজাম উদ্দিন শুধু চা বিক্রি করতেন তেরশ্রী বাজারে। তেরশ্রী কলেজের শিক্ষকদের নিয়মিত আড্ডা বসত তার দোকানে। ঐ সময় তেরশ্রী বাজারে কোন মিষ্টির দোকান না থাকায় কলেজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য মিষ্টি আনা হতো ঘিওর বাজার থেকে। যথারীতি একবার ঘিওর থেকে মিষ্টি আনা হয়। কিন্তু সংরক্ষণের অভাবে তা নষ্ট হয়ে যায়। তখন শিক্ষকগণ নিজামের দোকানে এসে নিজামকে বলেন, তুমিও তো মিষ্টি তৈরি করতে পারো, তাহলে তো আর আমাদের দূর থেকে মিষ্টি আনতে হয়না। সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে একদিন নিজাম মিষ্টি তৈরি করে কলেজের শিক্ষকদের খাওয়ান। শিক্ষকরা সবাই তার মিষ্টির প্রশংসা করেন। সেখান থেকেই নিজামের মিষ্টি তৈরির সূচনা।  

মাওয়া মিষ্টি

এর মধ্যে একদিন তিনি চা বানানোর জন্য দুধ গরম করেন কিন্তু ঐদিন খুব বেশি ক্রেতা না আসায় আনেক দুধ থেকে যায়। আর এই বেচে যাওয়া দুধ জ্বাল দিয়ে দুধের গুড়ো তৈরি করে মিষ্টির চারদিকে লাগিয়ে দেন এবং তা কলেজ শিক্ষকদের খাওয়ান। শিক্ষকরা সবাই এই মিষ্টির খুব প্রশংসা করেন এবং এটির নাম দেন ‘মাওয়া মিষ্টি’। বর্তমানে এখানে মাওয়া মিষ্টি, মালাই চপ, শাহী চমচম, রস মালাই, ছানা, টফি সন্দেশ সহ নানা ধরনের মিষ্টি পাওয়া যায়।

মালাই চপ

দুপুর ১২টা। এসে দাঁড়ালাম নিজামের মিষ্টির দোকানের সামনে। চারচালা টিনের ঘর। বসার জন্য রয়েছে হাতে গোনা কয়েকটি মোড়া। দোকানের পেছনেই মিষ্টি তৈরি চলছে। ভিতরে ক্রেতার ভিড়। ভিড় ঠেলে ভিতরে ঢুকেই চোখে পড়ল টেবিলের উপর ধোঁয়া তোলা রসে ভরা, লোভনীয় গরম মালাই চপ। বোঝাই যাচ্ছিল মাত্রই চুলা থেকে নামানো। দেখে আর তর সইছিল না। টপাটপ খেয়ে নিলাম মালাই চপ। আহা কি স্বাদ! কি অপুর্ব ! কি অদ্ভুত মিষ্টতা! একটু একটু করে মালাইচপ মুখে দিচ্ছিলাম আর যেন হারিয়ে যাচ্ছিলাম মিষ্টির কোন রাজ্যে। পাশেই গামলা ভরা রস মালাই, শোকেজে মাওয়া মিষ্টি, টফি সন্দেশ, কোনটা রেখে কোনটা খাব। এবার একটু একটু করে সবগুলই খাওয়া যাক। তবে মালাই চপটা সেরা। এর সঙ্গে অন্য কোন মিষ্টির তুলনা হয় না। এ মিষ্টির স্বাদের ভিন্নতার কথা আপনার মনে রাখতে হবেই।

টফি সন্দেশ

বর্তমানে নিজামের মিষ্টির তিনটি শাখা রয়েছে। প্রধান শাখা ও কারখানা তেরশ্রী বাজারে, ঘিওরের পঞ্চ রাস্তা মোড়ে এবং মানিকগঞ্জ শহরের খালপাড়ে একটি করে শাখা রয়েছে। মানিকগঞ্জের ঝিটকার খেজুরের গুড় যদি মানিকগঞ্জের ঐতিহ্য হয়ে থাকে তবে স্পষ্টতই নিজামের মিষ্টিও ঐতিহ্যের অংশীদার। স্বাদের অতুলনীয়তাই এটিকে মানিকগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী খাবার তালিকায় স্থান দিয়েছে। যারা মিষ্টি ভালবাসেন বা যাদের দেশের ঐতিহ্যবাহী খাবারের প্রতি আগ্রহ আছে তাদের একবার হলেও নিজামের মিষ্টির স্বাদ নিতে পারেন।

 

কিভাবে যাবেন

ঢাকার গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে সরাসরি ঘিওরের বাস পাবেন। ঘিওর নেমে রিক্সা দিয়ে চলে যেতে তেরশ্রী বাজার।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

আমাদের সাবস্ক্রাইব করুন
Please log in to share your opinion

Related Posts

আমাদের সাবস্ক্রাইব করুন