নারী সুপারভাইজার ও নতুন অভিজ্ঞতা (পর্ব-২)

কাফি কামাল

ঘড়ির কাটা তখন রাত সাড়ে আটটা ছুঁইছুই। টিপটিপ বৃষ্টি ঝরছে বাইরে। কাউন্টারের চঞ্চলা তন্বী ‘হ্যালো’ শব্দে মনোযোগ আকর্ষণ করে বললেন- ‘গেট রেডি। পাঁচ মিনিট পরই তোমার বাস ছেড়ে যাবে।’ সে সন্ধ্যা থেকে অপেক্ষার প্রহর গুনছি। এলিট সার্ভিসের ভলবো বাসে ওঠে নির্ধারিত আসনে গিয়ে বসতেই হাজির হলেন কাউন্টারের এক তরুনী। আমার শুভযাত্রা কামনা করে জানতে চাইলেন, সব ঠিক আছে তো? মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে তাকে আশ্বস্ত করলাম। অল্পক্ষণের মধ্যেই টার্মিনাল ছাড়িয়ে হাইওয়ে ধরে ছুটতে শুরু করল বাস। তরুণীটি প্রথমে নাস্তার প্যাকেট, পরে পাতলা একটি কম্বল নিয়ে এল। বুঝলাম, তরুণীটি আসলে এ বাসেরই সুপারভাইজার।

লন্ডন কিংবা মালয়েশিয়ায় বাস কাউন্টার পরিচালনায় মেয়েদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখলেও রাত্রীকালীন বাসে তরুণী সুপারভাইজার দেখলাম এই প্রথম, বার্মায়। বিমান সংস্থাগুলোতে নারীকর্মীদের প্রাধান্য সারাবিশ্বে একটি প্রতিষ্ঠিত বিষয়। এয়ার হোস্টেস শব্দটির দারুণ বাংলা প্রতিশব্দ বিমানবালা স্থান করে নিয়েছে অভিধানে। কিন্তু বাস সার্ভিসে নারী সুপারভাইজার, অভিজ্ঞতার ঝুলিতে এক নতুন সংযোজন। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব মাত্র আড়াইশ কিলোমিটার। বেশিরভাগ পরিবহন সংস্থার বাতানুকুল বাসের ভাড়া হাজার টাকা। রেঙ্গুন থেকে বাগানের দূরত্ব সোয়া ছয়শ কিলোমিটার, এলিট সার্ভিসের বাতানুকুল বাসের ভাড়া মাত্র চৌদ্দ হাজার কিয়েট বা একহাজার টাকা। বাংলাদেশে বাস সার্ভিসগুলোতে এক বোতল পানিও অনেক সময় চেয়ে নিতে হয়। বার্মায় নাস্তার প্যাকেট পেলাম সৌজন্য।

বাংলাদেশে এককালে দুরপাল্লার বাস সার্ভিসগুলোতে চল ছিল টেলিভিশনের। ইঞ্জিনের ঠিক উপরে ছাদের সঙ্গে আটকানো সে টেলিভিশনে দেখানো হতো ছায়াছবি। কোন কোন সার্ভিসে বাজতো কোরআন তেলাওয়াত বা ওয়াজের ভিডিও। ইদানিং সে প্রবণতা খুব একটা চোখে পড়ে না। প্রায় একই সময়ে অনেক বাসে থাকতো ক্যাসেট প্লেয়ার। চালকের সামনে থাকতো বাক্সভরা ক্যাসেট। কখনও সঙ্গীত রসিক শ্রোতার অনুরোধে, তবে প্রায়ই বাজতো চালকের পছন্দের গান। এখন ভাবলে হাসি পায়- তখন অনেক যাত্রীই যাত্রাপথে শোনার জন্য ক্যাসেট নিতেন। সুপারভাইজারকে অনুরোধ করতেন সে গানগুলো বাজানোর। গান বা ভিডিও চালানো নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক এমনকি হাতাহাতির ঘটনাও দেখেছি বহুবার। সেসব এখন ধূসর স্মৃতি। যাত্রীদের অনেকেই কানে এয়ারফোন লাগিয়ে মোবাইলেই পছন্দের গান শোনেন।

ঝকঝকে বাস কাউন্টার

একবার ভারতের বিহার রাজ্যের গয়া থেকে রাজগীর যাচ্ছিলাম বাসে। টিকিট সর্বস্ব লোকাল বাসে যেতে যেতে মুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম চারপাশের দৃশ্যাবলী। যখন টেলিভিশনে নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় হিন্দিগানের ভিডিও প্লে করা হলো তখন প্রাকৃতিক দৃশ্য আর সুর আমার মন নিয়ে শুরু করল রীতিমতো দড়িটান খেলা। সেদিন চোখকে মগ্ন রেখেছিলাম দৃশ্যভোজে আর কান পেতেছিলাম সুর-সঙ্গীতে। আরেকবার তেমন পরিস্থিতিতে পড়েছিলাম মালয়েশিয়ায়। লাংকাউয়ি থেকে ফেরিতে ফিরছিলাম কুয়ালাপারলিস। ফেরির টেলিভিশনে প্লে হচ্ছিল মালয় নাটক। পারাপারের সময়ে মালয়নাটকে এতটাই মগ্ন হয়ে পড়েছিলাম যে বেমালুম ভুলেই গিয়েছিলাম ফেরি ভাসছে ভারত মহাসাগরের জলে।

কিন্তু মায়ানমারে এসে দেখলাম ভিন্ন। বাসের টেলিভিশনে চলছে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ধর্মীয় আচারের দৃশ্য আর ত্রিপিটক পাঠ। ভারতে বেশিরভাগ যানবাহনে চালকের সামনে ঝুলতে থাকে হনুমান, গনেশ আর লেবু-মরিচের মালা। জানি না, এমন যাত্রায় ধর্মনিরপেক্ষদের হৃদয়ের রসায়ন কেমন বুদ্বুদ তোলে। একে তো ক্লান্ত তার ওপর বিদ্ঘুটে ভাষা। কেবল পুরিম্মা পুরিম্মা একটি শব্দই বাজছে কানে। কম্বল মুড়ি দিলে অল্পক্ষণের মধ্যেই তলিয়ে গেলাম ঘুমের দেশে।

আমার উল্টোপাশের আসনে এক তরুণ দম্পতি। গাড়ি ছাড়ার পর থেকেই তারা জুড়ে দিয়েছেন গল্প। আমার পাশে যে তরুণ যাত্রীটি বসেছে সে এতক্ষণ ব্যস্ত ছিল মোবাইলে গেমে। হঠাৎই সে বার্মিজ ভাষায় আমার কাছে কিছু একটা জানতে চাইলে আমি তার মুখের দিকে তাকালাম। এবার সে আমার মুখের দিকে খেয়াল করে ইংরেজিতে প্রশ্ন করল- কোন দেশ থেকে এসেছেন? ছোট্ট করে বললাম, বাংলাদেশ। ছেলেটি যেন কিছুটা উৎসাহ পেল। তার পরের প্রশ্ন কোথায় যাবেন? আবারও এক শব্দে উত্তর দিলাম- বাগান। এবার তার চোখে মুখে ফুটে উঠল কৌতূহলের রেশ। বেড়াতে যাচ্ছো নিশ্চয়ই? আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ি। মনে মনে ভাবি, এবার ছেলেটি নিশ্চয়ই জানতে চাইবে আমি বুড্ডিস্ট কিনা। কিন্তু না সে পরের প্রশ্নটিই করলো কি করো তুমি? আমি সংবাদপত্রে কাজ করি শুনে তার আলাপের আগ্রহ দীর্ঘায়িত হচ্ছিল। এবার আমিই প্রশ্ন করলাম- তোমার নামটা কি জানতে পারি? কেন নয়, ছেলেটি হেসে বলে- অং লিন। তো, লিন- তুমি কোথায় যাচ্ছো? মাইকটিলা, বাগানের আগে।

খেয়াল করলাম বিপরীত পাশে বসা দম্পতি আমাদের কথা শুনছে। এতক্ষণ তারা নিজেরাই কথা বলছিল। আমি তাদের দিকে তাকাইনি। সৌজন্যতার খাতিরে জানতে চাইলাম, উনারা কি তোমার সাথে যাচ্ছে? ছেলেটি বলল, উনি আমার বোন জামাই। পুলিশে চাকরি করে। তাদের এগিয়ে দিতে যাচ্ছি। আমি হাই বলে তরুণটির দিকে হাত বাড়িয়ে দিলাম। সেও হাত বাড়ালো। কিন্তু কথা হলো না। আমার পার্শ্বযাত্রী সবে ম্যানেজমেন্টে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেছেন। আপাতত বেকার। পড়াশোনা করতে বিদেশ যাবার চেষ্টা করছেন। কিন্তু যে পরিমান টাকার প্রয়োজন তা যোগাড়ে তার বাবা রাজী হচ্ছেন না। উচ্চশিক্ষার্থে তার ফার্স্ট চয়েজ জাপান, সেকেন্ড চীন। আমি তাদের শুভযাত্রা কামনা করে কম্বলটি গায়ে জড়িয়ে নেয়ার আগে ছেলেটি সান্ত্বনা দিয়ে বললাম- চেষ্টা করো, সুযোগ মিলেও যেতে পারে। তারপর ঘুমের দেশে ডুবে যেতে যেতে ভাবলাম তৃতীয় বিশ্বের শিক্ষিত তরুণদের আগ্রহের বিষয়টি। বিশ্বায়ণের এ যুগে সবাই এখন স্বচ্ছল ভবিষ্যতের জন্য উন্নত বিশ্বের দিকে পা বাড়াতে চায়।

মিয়ানমারে নারীরা দূরপাল্লার বাসের চালক হিসেবেও কাজ করে

মধ্যরাতে পার্শ্বযাত্রী লিনের মৃদু ধাক্কায় ঘুম ভেঙে গেল। মুখের ওপর থেকে কম্বল সরিয়ে খেয়াল করলাম বাস দাঁড়িয়ে আছে একটি হাইওয়ে রেস্টুরেন্টের সামনে। লিন বলল, নেপিডো এসেছি। ফ্রেশ হয়ে চা-টা খেয়ে নিতে পারো। আধঘণ্টার বিরতি দেবে বাস। বাস থেকে নামার সময় আমার জন্য অপেক্ষা করছিল আরেক বিস্ময়। সুপারভাইজার তরুণীটি হাতে ছোট্ট একটি প্যাকেট ধরিয়ে দিলো। সে প্যাকেট খুলতেই বেরিয়ে এলো একটি ছোট ব্রাশ, মিনি টুথ পেস্ট আর ওয়েট টিস্যু। ইচ্ছে করলে চা-নাস্তার আগে দাঁত ব্রাশ করে নিতে পারি। যুক্তরাজ্য কিংবা মালয়েশিয়ার মতো দেশেও রাতের বাসজার্নি করেছি কিন্তু এমন সার্ভিস কোথাও পাইনি। নিজের দেশে তো এটা এখনও কল্পনার অতীত। বুঝলাম, মায়ানমারে কেবল স্বৈরশাসনের অবসান ঘটেনি, পরিবর্তন ঘটছে সর্বত্র। তুলনামুলক কম পয়সায় এত দীর্ঘ বাতানুকুল বাসজার্নি তার ওপর এত সার্ভিসের একটাই মানে, তারা নিজেদেরকে পর্যটকবান্ধব হিসেবে পরিচিত করাতে চাইছে বিশ্বে।

বার্মার নতুন রাজধানী নেপিডোর সিটির প্রান্তে হাইওয়ে সংলগ্ন রেস্টুরেন্টটির পরিবেশ বেশ পরিচ্ছন্ন। বাংলাদেশে ঢাকা-চট্টগ্রাম বা ঢাকা-উত্তরবঙ্গে নাইট কোচ জার্নিকে কেন্দ্র করে কুমিল্লা ও সিরাজগঞ্জে হাইওয়ের দুইপাশে গড়ে উঠেছে বেশকিছু রেস্টুরেন্ট। যারা এসব পথে যাতায়াত করেন তারা জানেন রেস্টুরেন্টগুলোর পরিবেশ কত হল্লাপূর্ণ আর ওয়াশরুমগুলো কত অপরিচ্ছন্ন। তার তুলনায় বার্মার এ হাইওয়ে রেস্টুরেন্টের ওয়াশরুমগুলো রীতিমতো ড্রয়িংরুম। কেবল পরিচ্ছন্নই নয়, পরিসরও। আমার কাছে মনে হয়, এটা মানুষের বড় মন আর ইতিবাচক মানসিকতারই বিষয়। কোন এক সমাজতাত্ত্বিকের কাছে শুনেছিলামÑ কোন দেশের আর্থসামাজিক পরিস্থিতি বুঝতে হলে দেখতে হবে সে দেশের রাস্তাঘাট আর যেতে হবে বাজারে। আমার মনে হয়, কোন দেশের মানুষের মানসিকতার অনেকটাই প্রকাশ পায় সে দেশের শৌচাগার ব্যবস্থায়।

রেস্টুরেন্টে ক্রেতার চাপ নেই। ওয়েটারগুলো রিলাক্সমুডে খাবার সার্ভ করছে। কিন্তু তাতে অযথা বিলম্ব নেই। খেয়াল করে দেখলাম রসুইঘরে নানা পদের তরকারি সাজানো। রেস্টুরেন্টে খাবার ছাড়াও বিভিন্ন ফলের সমাহার। হরেক রকম কেক-বিস্কুট সাজানো থরেথরে। কিন্তু আমার আধানিরামাষী আধা খুতখুতে মন সেদিকে টানছে না। আমি বিদেশ বা ঢাকার বাইরে গেলেও পাকস্থলী বিভ্রাট আতঙ্কে যথাসম্ভব রসনার ওপর স্বৈরাচার চালাই। খুতখুতে মনে নিয়ে গলাধকরন করার সন্ধ্যা রাতের বিরিয়ানিও এখন পর্যন্ত হজম হয়নি। ফ্রেশ হওয়ার পর ঘুরতে ঘুরতে তাই ফলের শোকেসটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। হলদে রঙের সুপুষ্ট আমগুলোর দিকে ইশারা করে আমি দাম জানতে চাইলে শোকেসের ওপারে অর্ডারের অপেক্ষায় থাকা তরুণীটি বলল, দুইশ কিয়েট। সস্তা বেশ। দুইটি আম কেটে দেয়ার অর্ডার করে বললাম, দ্রুত কেটে পার্সেল করে দিন। মেয়েটি দ্রুতই আমের খোসা ছিলে কাটা টুকরোগুলো আলাদা দুইটি ওয়ানটাইম বক্সে ভরে দিল। পলিপ্যাকের ভেতর দুইটি কাঠিও দিল। আমি তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে কাউন্টারে বিল দিতে গেলেই বাধলো বিপত্তি। ম্যানেজার চেয়ে বসলেন চার হাজার কিয়েট দিন। আমি বিস্মিত হয়ে বললাম, আমার কাছে দাম বলা হয়েছে তো দুইশ করে চারশ কিয়েট। ম্যানেজার বলল- না, না, চার হাজার কিয়েট। রীতিমতো দশগুন বেশি। আমার মনে স্বাভাবিকভাবে সন্দেহ তৈরি হল। বিদেশী দেখে কি আমার গলা কাটতে চাইছে! আমি বিস্ময়ভরা চোখে তার দিতে তাকালে সে আন্দাজ করে নেয় আমি অসন্তুষ্ট হয়েছি। এবার সে নিজ গরজে সেলসম্যান তরুণীটিকে ডাক দেয়। বার্মিজ ভাষায় কি যেন বলে পরস্পর। পরক্ষণেই জিবে কামড় দিয়ে মেয়েটি আমার দিকে হাসিমুখে তাকালে বুঝতে পারি সে ভুল করেছে।

এবার আমি পকেটে হাত দিলে ম্যানেজার কি মনে করে বলে উঠলো- থাক, আর দিতে হবে না। আমি ইতস্তত করলে, ম্যানেজার হাসিমুখেই বলল- ইটস ওকে। আমি আমের প্যাকেটটি নিয়ে গাড়ি গিয়ে উঠি। দ্বন্দ্ব কাটে না। আসলে কি মেয়েটি ভুল বলেছে, না লোকটি বেশি দাম দাবি করছিল? তিনদিন পর রেঙ্গুনে একবার আম কিনতে গেলে আমার সে দ্বন্দ্ব কাটে। দোকানি প্রতিটি আমের দাম হাঁকে এক থেকে দেড় হাজার কিয়েট। দুই তিন দোকান ঘুরে বুঝতে পারি হাইওয়ে রেস্টুরেন্টে দাম একটু বেশিই। তবে সেলসম্যান আমাকে যত কম দাম বলেছিল অত কম কোনভাবেই নয়। বাংলাদেশেও দশ-পনের টাকায় একটি ভালো জাতের হাফ কেজি ওজনের আম চাইলে দোকানি নিশ্চিত লজ্জ্বা দেবে। বুঝলাম, হাইওয়ে রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার সেদিন তার সেলসম্যানের মুখের জবান রক্ষা করেছে। সেলসম্যান ভুল করে কম দাম বলেছে। ম্যানেজার যদি ক্রেতার কাছে সঠিক দাম নেয় তবে ক্রেতা মনে কষ্ট পাবে। এতে তাদের সুনাম নষ্ট হবে। তাই সেলসম্যানের মুখের জবান ও ক্রেতার মন রক্ষায় সেদিন হাইওয়ে রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার রীতিমতো লস দিয়েছে।

বাংলাদেশে এমন ঘটনা হলে ম্যানেজার সেলসম্যানের ভুলের বিষয়টি মানতেন এটা বিশ্বাস করতে পারি না। মনের মধ্যে একটি অপরাধবোধ কাজ করে, হাইওয়ে রেস্টুরেন্টে দরদামজনিত ভুলের খেসারত কি ওই সেলসম্যান তরুণীটির মাইনা থেকে খসিয়ে দেবে ম্যানেজার? মনের পর্দায় ভাসে জিবে কামড় খাওয়া লাস্যময়ী তরুণী সেলসম্যানটির মুখ।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

আমাদের সাবস্ক্রাইব করুন
Please log in to share your opinion

Related Posts

আমাদের সাবস্ক্রাইব করুন