মিশকাত শরীফ, ইউনান (চীন) থেকে
২০১৬ সালের কথা, তখনো আমি চীনে আসিনি। এলজিইডি অটোমেটেড বিটুমিন স্প্রে করে রাস্তা নির্মাণ করার দুটি গাড়ি কিনেছে। বাংলাদেশের গাড়ি সরবরাহকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খুবই কম দামে বাজে মানের গাড়ি কিনেছে চীনের ICOM নামক এক প্রতিষ্ঠান থেকে। গাড়ির মান এতটাই খারাপ ছিল যে দরপত্রে উল্লেখিত প্রযুক্তিগত কোন চাহিদাই পূরণ হয়নি। এলজিইডির ক্রয় কমিটির প্রধান আব্দুর রহিম সাহেব। শুনেছি খুবই সৎ কর্মকর্তা তাই ঘুষ দিয়ে কাজ না হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গাড়ি প্রস্ততকারী প্রতিষ্ঠান থেকে পয়সা খরচ করে প্রকৌশলী উড়িয়ে নিয়ে আসে গাড়িতে প্রযুক্তি সংযোজন করার জন্যে, সঙ্গে আমাকেও ডাকা হয় চীনা প্রকৌশলীর চীনা ভাষা অনুবাদক হিসেবে।
গাড়ি দুটি রাখা ছিল গাজীপুর রাজেন্দ্রপুর এলজিইডির রেস্টহাউজ কমপ্লেক্সে। এটা ব্র্যাক সেন্টারের এর উল্টো দিকেই। চারিদিক শালবন। রেস্টহাউজ এরিয়া অনেক বড় আর নির্জন। কমপ্লেক্স চত্বরে পড়ে রয়েছে বহুসংখ্যক পুরোনো আর অকেজো গাড়ি। আর একেকটা অকেজো গাড়ি বিভিন্ন সাপের বিলাসবহুল বাড়ি। সাপ প্রচুর হওয়ায় ছিল অনেকগুলো কুকুর। সঠিক সংখ্যা মনে পড়ছেনা। তবে ২৩ কি ২৫ এমনটা হবে। রেস্টহাউজের বাবুর্চি ছিলেন হাকিম চাচা, অসাধারণ রান্না জানেন। ছিলাম প্রায় দু সপ্তাহ। তিনি প্রতিদিন চেষ্টা করতেন নতুন নতুন মজার মজার খাবার রান্না করতে। তবে চীনা প্রকৌশলী সকাল হলেই আবদার শুরু করতো কুকুর অথবা সাপ ধরে রান্না করে দেয়ার জন্যে। প্রথম প্রথম আমি ভেবেছিলাম সে হয়তো মজা করছে কিন্তু না, সে আসলেই কুকুর খাবার জন্য উদগ্রিব ছিল। একদিন তো সে নিজেই কুকুর ধরার চেষ্টা করছিল। আমার মাথায় কাজ করত না এ আবার কোন গ্রহের প্রাণী!
২০১৮ সালের জানুাারি মাসে অনুবাদক হিসেবে এবিসি ফ্যানের মালিক স্বপন ভাইয়ের সঙ্গে আমি কোয়ংচৌ আর ওয়েনচৌতে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান আর কারখানা পরিদর্শন করেছিলাম। শুনেছিলাম কোয়ংচৌ-এর মানুষ নাকি সবকিছুই খায়। আর এই সবকিছুর পরিধি বুঝাতে তারা বলে যে, ‘পাখা আছে এমন বিমান ছাড়া, পা আছে এমন চেয়ার-টেবিল ছাড়া। কোয়ংচৌ অধিবাসী তারা সবকিছুই খায়' একথার সত্যতা নিজের চোখেই দেখলাম কোয়ংচৌ ফোশানে দুপুরবেলা খাবার রেস্তোরাঁয়। রেস্তোরাঁর প্রবেশপথেই রাখা বেশ কিছু খাঁচা আর তার মাঝেই কিলবিল করছে বিভিন্ন প্রজাতির জ্যান্ত সাপ। ভোজ নিমন্ত্রণকারী বেশ জোড়াজুড়ি করলো যেন খেয়ে দেখি, আমি তাকে জিগ্যেস করলাম সাপ আবার খাদ্য হয় নাকি? সে উত্তরে বলল, খুব মজা, কিছুটা মুরগির গোশতের মতো!
২০১৯ সালে গিয়েছিলাম ইউনান প্রদেশের ওয়েনশান নামক শহরে। দেখলাম কুকুরের গোশতের রমরমা বাজার। এ শহরের ঐতিহ্যবাহী খাবার নাকি কুকুর! এমন উদ্ভট কুরুচিপূর্ণ অখাদ্য কি শুধুমাত্র চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইউননান প্রদেশের ছোট ওয়েনশান নামক শহরের চিত্র? না, এ চিত্র খোদ রাজধানী শহর বেইজিং এর মূল কেন্দ্রস্থল ওয়াংফুচিনেই। ২০১৮ নভেম্বরে গিয়েছিলাম বেইজিং ভ্রমণে। বেইজিং সিটি সেন্টার Wang Fujin এ অবস্থিত পোকামাকড়ের রেস্তোরা এলাকা[/caption] একদিকে যেমন দেখেছি পাঁচ হাজার বছরের মানব সভ্যতার নিদর্শন সেইসাথে দেখেছি শহরের কেন্দ্রস্থল ওয়াংফুচিনে আদিম অসভ্যতার পোকামাকড়ের জমজমাট বাজার। চীনারা অর্থনীতি আর প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে এগিয়েছে বহুদূর তবে এমন অখাদ্য-কুখাদ্য কি বাতির নিচেই অন্ধকার নয়?
Photo-Writer & AFP