login
হোম
পাতাগুলি
লেখক
যোগাযোগ
ভিডিও
মিডিয়া
উৎসব-আনন্দে
ছুটির দিনে
দু চাকায় দুনিয়া
তারকাদের বেড়ানো
পছন্দের কেনাকাটা
দেশ-মহাদেশ
চীনের ডায়েরি
পাশের দেশ
ভ্রমণের সাত সতেরো
রুট প্ল্যান
রকমারি
রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা
মতামত
সফরনামা
রসনার খোঁজে
হোটেল-মোটেল
কাবুলের দিনরাত্রি
ট্রাভেলগবিডি ডেস্ক
- 15 November, 2019
মাসুদ রানা অফিসের কাজে নিমগ্ন ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ। রুম থেকে বের হয়েই দেখি অফিসের অদূরেই পাহাড়সম ধোঁয়ার কুন্ডলী । বুঝলাম বোমা হামলা হয়েছে। ঢাকা শহরে বাসার সামনে তরকারিওয়ালার হাকাহাকি যেমন নিত্যদিনের ঘটনা, আফগানিস্তানে বোমা হামলা হওয়াটাও তেমন গা সওয়া ব্যাপার। অধিকাংশ হামলাগুলো টার্গেট কিলিং। এর মাঝে আত্মঘাতী হামলাই বেশি। আফগানিস্তানে নিরাপদ বলতে কোন জায়গাই নেই। এটা নিশ্চিত করে বলা যাবেনা যে কাল আমার বাসার সামনে বোমা হামলা হবেনা বা কাল আমি অফিস থেকে গেস্টহাউজে ফিরব। [caption id="attachment_5441" align="aligncenter" width="635"]
বয়ে চলা অনিরাপদ জীবন[/caption] মাঝে মাঝে জরুরি প্রয়োজনে বাইওে বের হতে হয়। আমি যেখানেই যাইনা কেনো স্থানীয়রা প্রথমে আমাকে ভারতীয় হিসেবে সনাক্ত করে। তারপর যখন বলি আমি বাংলাদেশি, তখন লম্বা দম নিয়ে ভাঙা ভাঙা ইংরেজিতে বলে, ওহ, সাকিব আল হাসান, ক্রিকেট। উই মুসলিম, ইউ মুসলিম। ইউ আর মাই ফ্রেন্ড। এদের এই আন্তরিকতা আমাকে মুগ্ধ করে। এরা যাদেরকে বন্ধু ভাবে, দেখা হলেই দু’হাত উজাড় করে বুকে জড়িয়ে ধরবে, তারপর গালে গাল মিলাবে। যদিও অধিকাংশ সময়ে ব্যাপারটা আমার জন্য বিব্রতকর। কারণ হ্যান্ডসেকেই আমি অভ্যস্ত। তবে কোন আফগান যদি বুক বাড়িয়ে দেয় আর আপনি হাত বাড়িয়ে দেন, এটাকে তারা চরম অপমান হিসেবে নেয়। আফগানদের আন্তরিকতার প্রথম ধাপ হলো আপনার দিকে এক কাপ চা বাড়িয়ে দেবে। আমাদের মত দুধ চিনির চা নয়। স্রেফ চিনি ছাড়া গ্রিন টি। চায়ের সঙ্গে দুধ চিনি মেশাতে হয় এটা এদের কাছে হাস্যকর। তবে আমরা যেমন এক কাপ চা শেষ করেই দ্বিতীয় কাপের জন্য হাত বাড়ায়ই না আফগানরা এর উল্টো। এরা পুরো ফ্লাক্স নিয়ে বসবে আর কাপের পর কাপ খেতে থাকবে। [caption id="attachment_5443" align="aligncenter" width="647"]
আফগানিরা প্রচুর চা পান করেন[/caption] এদের খাবারের গড়পড়তা মেন্যু হলো, সকালে নান আর গ্রিন টি, দুপুরে নানের সঙ্গে কাবাব এবং গ্রিন টি, রাতে নান এবং গ্রিন টি। আমরা যেমন খাবারের মাঝে মাঝে পানি খাই, এরা খায় গ্রিন টি। আর নানগুলো দেখার মতো। একেকটা ক্রিকেট ব্যাটসম্যানের প্যাড সাইজের। বাংলাদেশে যেমন কাপড়ের দোকানে কাপড় ঝোলানো থাকে, এখানে খাবারের দোকানে নান ঝোলানো থাকে। আমার কাছে প্রিয় আফগানি খাবার হলো, কাবুলি পোলাও, বিরিয়ানি আর নানান পদের কাবাব। প্রতিদিন অফিসে এসেই তাহির ভাইয়ের সঙ্গে আমার প্রথম কথা হয়। তাহির ভাই আমাদের অফিস সহকারী। প্রায় ১৭ বছর ধরে কাজ করছে। প্রথমে আমাকে দেখে বলবে কি খবর সবর বেটা! বাংলা বেশ স্পষ্ট। আমি রুমে ঢুকলেই সে কফি নিয়ে আসবে। এই তোমার কফি, এই তোমার কম্পিউটার, এই তোমার চেয়ার, তোমার আমার কথা শেষ। খুবই সাদামাঠা কথা। তবে কথাগুলোর মাঝে স্নেহের তীব্রতা অনেক। মায়াভরা চোখের এই কথাগুলো বাংলাদেশি কোন অফিস সহকারী আমাকে বলেনি। [caption id="attachment_5444" align="aligncenter" width="655"]
দোকানে ঝোলানো বাহারি আফগানি রুটি[/caption] যখন কাবুলে প্রথম পা রাখি, বিমানবন্দর থেকে বেরিয়েই দেখলাম মেয়েরা প্রাইভেট কার নিয়ে বসে আছে। অর্থাৎ নারী চালক! বাহ, নারীর ক্ষমতায়নের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত! এটাও বুঝতে দেরি হলোনা, আশপাশ থেকে অনেক অযাচিত শব্দ ভেসে আসছে। সত্তরের দশকের কিছু ছবি দেখেছিলাম যেখানে আফগানি নারীরা স্কার্ট পরিহিত। অবশ্য বর্তমান আফগান নারীরা রোরকা ও স্কার্ফে বেশি পরে। রাস্তায় এদের ময়লা ফেলতে দেখিনা। চিপস বা সিগারেটের প্যাকেটও আমার তেমন একটা চোখে পড়েনি। আফগানদের প্রতিটি বাড়িই একেকটা দুর্গ। বাড়ির বাইরে উঁচু প্রাচীর। তার উপরে কাটা তারের বেড়া। প্রধান গেটটা শক্ত লোহার তৈরি। ভিতরে আরও দুয়েকটি গেট। অর্থাৎ নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। একবার অফিসের কাজে জাতিসংঘের একটি অফিসে গিয়েছিলাম। সিকিউরিটি চেক করতেই আমার পুরো ৪৫ মিনিট লেগেছিল! [caption id="attachment_5445" align="aligncenter" width="658"]
যুদ্ধে বিধ্বস্ত হলেও কাবুল বেশ পরিচ্ছন্ন।[/caption] এখানে সাধারণত স্ত্রী নিয়ে কেউ কথা বলতে চায়না। এবং আপনি কারও স্ত্রীর খোঁজ খবর নেন এটাও চায়না। আত্মীয়স্বজন ছাড়া এরা বাইরের কাউকেই নিজের বাসায় নেবেনা। আমার খুব কাছের একজন আফগান বন্ধু মোবাইলে তার স্ত্রীর কনভোকেশনের ছবি দেখাচ্ছিল। শুনলে অবাক হবেন যে আমিই প্রথম কোন ভিনদেশি যে তার স্ত্রীর ছবি দেখেছি। একদিন তার বাসার পাশে দিয়ে যাচ্ছিলাম। কোন একটা কাজে তার বাসায় ঢুকতে হবে। ও কিছুক্ষণ ভেবে বলল মাসুদ তুমি আসতে পারো তবে দু মিনিট অপেক্ষা কর। বাসার বারান্দায় যত মহিলা ছিল সবাইকে আগে ভিতওে যেতে বলল। তারপরে আমি গেলাম। তার সন্তানদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল। তবে কোন নারীর সঙ্গে পরিচয় তো দূরের কথা যতক্ষণ ছিলাম আমি কোন নারীর গলার শব্দ পর্যন্ত শুনতে পারিনি। প্রতিদিন সন্ধ্যায় গেস্ট হাউজের ছাদে ওঠা আমার নিত্যকার অভ্যাস। আমার একাকীত্ব বসবাসে এই ছাদটা আমার সবচেয়ে প্রিয়। গেস্ট হাউজ পাহাড়ের পাদদেশে। মাগরিবের আজান দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে প্রতিটি বাড়িতে আলো জ্বলা শুরু করে। এক বাতি দু বাতি করে হাজার জোনাকির মত জ্বলে ওঠে। মিটিমিটি তারার মত বাতিগুলো জ¦লতে থাকে। আমি পায়চারি করি ছাদের এপাশ থেকে ওপাশ। মাঝে মাঝে ঘরগুলো থেকে ভেসে আসে অপরিচিত শব্দ। মানে বুঝিনা। কিন্তু এটা বুঝি প্রতিটি ঘরেই রয়েছে স্বজন হারানো গল্প। জন্মিলে মরিতে হবে-এটাই এদের কাছে খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। ধীরে ধীরে রাত গভীর হয় আর আমার চোখ থেকে ঘুমগুলো দূরে চলে যায়। বাচা মরার সন্ধিক্ষণে অনিশ্চিত জীবন এক। ভোরের আলোতে যখন দিনের শুরু তখন দেখি অশান্ত এই বোমা হামলার মাঝেও ছোট শিশুরা স্কুলে যাচ্ছে। সে আবার ঘরে ফিরবে কিনা তার মা নিশ্চিত নয়। তার পরেও তাকে স্কুলে পাঠাচ্ছে। [caption id="attachment_5446" align="aligncenter" width="664"]
বোমা হামলার মাঝেও ছোট শিশুরা স্কুলে যাচ্ছে[/caption]
এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন
আমাদের সাবস্ক্রাইব করুন
Subscribe
Please log in to share your opinion
Login via Google
Login via facebook
Previous
First Page
Current Page :
Next
Last Page
Related Posts
আমাদের সাবস্ক্রাইব করুন
Subscribe