আগরতলার আদ্যোপান্ত

আহমেদ ফারুক

ঢাকা থেকে ভারতের সবচেয়ে কাছের রাজ্য ত্রিপুরা। ত্রিপুরার রাজধানী শহর আগরতলা। স্বল্প খরচে যারা ভারতে ঘুরতে এবং কেনাকাটা করতে চান তাদের জন্য আগরতলা হতে পারে উত্তম গন্তব্য। আগরতলা থেকে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে ভারতের প্রায় সব গন্তব্যে কম খরচে ভ্রমণ করা যায়। যেমন-আগরতলা থেকে ১৮০০ রুপিতে কলকাতায় যাওয়া যায়। সময়ও লাগে পঞ্চাশ মিনিটের মত। যেখানে ঢাকা থেকে ভাল মানের বাসে কলকাতায় গেলে খরচ হয় দুই হাজার টাকার কাছাকাছি। সময়ের কথা আর নাই বা বললাম। মোটামুটি একদিন বা একরাত লাগবেই। আগরতলা যাত্রা ঢাকা থেকে মহানগর প্রভাতী ট্রেনে সকাল ৭ টা ৪৫ মিনিটে যাত্রা শুরু করলে সকাল ১১টার মধ্যে আখাউড়া রেলওয়ে জংশনে নামিয়ে দিবে। ভাড়া ১৬০ টাকা। সেখানে সকালের নাস্তা সেরে অটোরিকশা অথবা সিএনজিতে করে চেকপোস্ট চলে যাবেন। ভাড়া নিবে সিএনজি জনপ্রতি ২৫ থেকে ৩০ টাকা। রিক্সা ৫০ থেকে ৬০ টাকা। চেকপোস্টে ট্রাভেল ট্যাক্স দিয়ে অভিবাসন অফিসের কাজ শেষ করে ঢুকে পড়বেন ভারতীয় সীমানায়। সেখানে সব কাজ শেষ করে ভারতের মূল ভূখন্ডে প্রবেশ। তবে দুই ইমিগ্রেশনের কোন প্রান্তেই কাউকে কোন বাড়তি টাকা বা ঘুষ দিবেন না। ভারতীয় সীমানা গেটে থেকে দুই মিনিট পথ এগুলেই মানি চেঞ্জার পাবেন। কিন্তু এখানে রুপির বিনিময় মূল্য অনেক কম দেয়। তাই শহরে গিয়ে রুপি ভাঙানোই ভালো। গেট থেকে বের হলেই আটোরিক্সা বা রিকশা পেয়ে যাবেন। দরদাম ঠিক করে উঠে পড়ুন।

নীর মহলের সামনে লেখক (ডানপাশে)

কোথায় থাকবেন? শহরের ‘হরি গঙ্গা বাসক রোড’, ফায়ার বিগ্রেড চৌমুনি, অথবা পোস্ট অফিস চৌমুনি এলাকায় বিগ বাজার থেকে শুরু করে সব শপিং মল অবস্থিত। এসব এলাকায় থাকা এবং খাওয়ার সব হোটেল আশেপাশেই পেয়ে যাবেন। ৮০০ থেকে ১৫০০ রুপির মধ্যে এসি বা নন এসি রুমের ভাড়া পড়বে। সেখানে পছন্দ না হলে আশেপাশে আরো কয়েকটা হোটেল দেখে নিতে পারেন। কি কি দেখবেন হেরিটেজ পার্ক: হোটেল থেকে নেমে একটা আটো নিয়ে হেরিটেজ পার্কে চলে যান। ভাড়া নিবে ৮০ বা ১০০ রুপির কাছাকাছি। পার্ক এন্ট্রি ফি ২০ রুপি। প্রচুর দেশি-বিদেশি গাছপালা এবং ত্রিপুরার বিখ্যাত সব যায়গা সমূহের ছোট ছোট মডেল দিয়ে এই পার্কটি তৈরি করা হয়েছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং ত্রিপুরার সব ঐতিহ্য একনজরে দেখে ভাল লাগবে আশা করি। হেরিটেজ পার্ক সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

উজ্জয়ন্ত প্যালেস:

এটি একটি জাদুঘর। জাদুঘরটি খুব বেশি সমৃদ্ধ না হলেও এর একটা অংশে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, সে সময়ের প্রকাশিত পত্রিকা এবং মুক্তিযুদ্ধের অনেক ছবি আছে, যেটি দেখলে ভাল লাগবে। 

উজ্জয়ন্ত প্যালেস

উজ্জয়ন্ত প্যালেসের বাইরের পরিবেশ চমৎকার। এর নির্মাণ শৈলি, খোলা মাঠ, প্রশস্থ বাগান, পানির ফোয়ারা সবকিছু মিলিয়ে চমৎকার পরিবেশ। সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত জাদুঘর খোলা থাকে। প্রবেশ ফি স্থানীয়দের জন্য ২০ রুপি আর বিদেশি পর্যটকদের জন্য ১০০ রুপি।

সিপাহিজলা অভয়ারণ্য: 

সিপাহিজলা অভয়ারণ্য[/caption] আগরতলা থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে সিপাহিজলা অভয়ারণ্য। অনেকটা সিলেটের মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের মতো। আগরতলা থেকে সিপাহিজলা যাবার পথটি বেশ রোমাঞ্চকর।

 

উদয়পুর:

আগরতলা থেকে দূরত্ব ৫৫ কিলোমিটার। অমরসাগর, মহাদেব দিঘি, জগন্নাথ দিঘি ইত্যাদি প্রশস্থ জলাশয়ের জন্য উদয়পুর বিখ্যাত। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য জায়গাটি তীর্থস্থানের মত।

 

নীরমহল:

আগরতলা শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নীরমহল। যেতে সময় লাগবে ১ ঘন্টা ৩০মিনিট। রুদ্রসাগরের বিশাল জলরাশির মাঝখানে মুসলিম স্থাপত্য রীতিতে তৈরি মহলটি দেখতে অনেক সুন্দর। ৩০ রুপি দিয়ে টিকিট কেটে ট্রলারে করে মহলে যেতে হয়।  শহর থেকে বাসে অথবা গাড়ি ভাড়া করেও নীরমহল যেতে পারেন। উজ্জয়ন্ত প্যালেসের সামনে অথবা মটর স্ট্যান্ড থেকে গাড়ি রিজার্ভ করতে পারবেন। সারাদিনের জন্য ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা নিবে। গাড়ি রিজার্ভ করে গেলে ড্রাইভারকে বলে রাখবেন বিকেল ৫টার আগে যেন চেকপোস্টে নামিয়ে দেয়। তাহলে সন্ধ্যা ৭টায় আখাউড়া থেকে মহানগর গোধূলি ট্রেনে ঢাকা ফেরত আসতে পারবেন।

নীরমহল

কোথায় কেনাকাটা করবেন? আগরতলায় বিশ্বের নামীদামি সব ব্রান্ডের শোরুম আছে।  কাপড় চোপড় কেনার জন্য কলকাতা বাজার, বিগ বাজার, মেট্রো শপিং কমপ্লেক্সসহ আরো অনেক দোকান আছে। কসমেটিকস এবং অলঙ্কার কেনার জন্য রয়েছে ওভারসিজ মার্কেট। গায়ের মূল্য থেকে ৫ থেকে ৭% কম রাখবে। চকলেট, বিস্কুট, বাদাম পাইকারি দরে কেনার জন্য গুলবাজার (নেতাজি চৌমুনি)। স্টিল, তামা কাসার তৈজসপত্রের জন্য কাসারি পট্টি। মোবাইল ও ইলেকট্রনিকস কেনার জন্য মেলার মাঠ।

photo-Writer, Deshebedshe & Oghran

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

আমাদের সাবস্ক্রাইব করুন
Please log in to share your opinion

Related Posts

আমাদের সাবস্ক্রাইব করুন