ট্রাভেলগবিডি ডেস্ক
ওটাম্বু। মেক্সিকোর এক প্রত্যন্ত জনপদ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২ হাজার ৩০০ মিটার বা ৭ হাজার ৫৪৬ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত মধ্য মেক্সিকোতে অবস্থিত এই জনপদ। ওটাম্বুর মোট ভূমির ১৫ ভাগ পর্বতময়, ৪০ ভাগ ঢালু এবং বাকি অংশ শুষ্ক সমভূমি ও উপত্যকা। ভূমির গঠন খেয়াল করলে খুব সহজেই পাঠক ধারণা করতে পারবেন এ জনপদে কৃষিকাজ করা কতটা কষ্টসাধ্য। বিশেষত ষোড়শ শতকে যখন কৃষিকাজের সব উন্নত সুযোগ-সুবিধা অনাবিষ্কৃত ছিল। তবে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক তথ্য হলো, আদিযুগ থেকেই এ জনপদের লোকেরা কৃষিকাজের ওপরই নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু কিভাবে তা সম্ভব হয়েছিল?
কৃষিকাজের সঙ্গে পানির নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। বলা যায়, পানি ছাড়া কৃষি কাজ একেবারেই অসম্ভব। এরকম অসম্ভবপর সময়ের মুখোমুখি হয়েছিল ওটাম্বুর মানুষ। জীবনধারণ তখন খুবই কষ্টের হয়ে উঠেছিল। বলছি, ষোড়শ শতকের গোড়ার দিককার কথা। কৃষিকাজের জন্য পানির অভাব দূর করতে বিশেষ এক কৌশলের আশ্রয় নেয় তারা। মৃত আগ্নেয়গিরি টেকাজেটের পতিত অঞ্চলে প্রাকৃতিক জলাধার ছিল। সেই জলাধার থেকে কৃত্রিম খাল তৈরি করে কৃষি ভূমিতে পানি আনার চিন্তা শুরু করে তারা। আর এ চিন্তার বাস্তবায়ন শুরু হয় ১৫৫৩ সালে। আর তা শেষ হয় ১৫৭০ সালে। নির্মিত হয় একটি খাল। যার নামকরণ হয় ফরাসি যাজক টেমবেকের নামে। খালটি কালক্রমে পরিচিত লাভ করে ‘টেমবেক পাদ্রে খাল’ বলে। বিশাল এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে প্রতিদিন গড়ে ৪০০ মানুষকে টানা ১৬ বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়েছিল। শুধু তাই নয়, স্পেনের রাজ পরিবার যখন প্রকল্পটির জন্য অর্থ দিতে অস্বীকৃতি জানায়, তখন নারীরা হাতে পোশাক তৈরি করে তা বিক্রি করে অর্থেও জোগান দিয়েছিল। এছাড়া স্থানীয় বাজার থেকে চাঁদা উত্তোলন করে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজে লাগানো হয়েছিল।
প্রকল্পের নেতৃত্বে ছিলেন ফরাসি যাজক ‘ফ্রি অরফ্রান্সিসডি টেমব্লেক’। তার নামেই এই খালটির নামকরণ করা হয়। খালটি উত্তরে জিমপোয়ালা থেকে দক্ষিণে ওটাম্বু পর্যন্ত প্রায় ৪৮.২২ কিলোমিটার বা ২৮ মাইল বিস্তৃত। এটি তৈরিতে স্থানীয় স্থাপত্য কৌশল ব্যবহার করা হয়। এটি সমতল থেকে উপত্যকা ও নদীর কিনার ধরে আবার সমতলে পড়েছে। মাঝে মাঝে স্থাপন করা হয়েছে জলাধার। এই জলাধারের পানি কৃষিকাজে ব্যবহার করা হয়। পুরো ব্যাপারটি দেখলে অবাক হতেই হবে। গ্রামীণ জনপদের মানুষেরা কিভাবে এই বিশাল খাল তৈরি করেছিল, তা যে কাউকেই ভাবাবে। আর এটি দেখে আপনি বিশ্বাস করতে বাধ্য হবেন, প্রয়োজনই আবিষ্কার করতে শেখায়।
খালের দুই পাড় মজবুত রাখতে ওটাম্বুবাসী তৈরি করে খিলানের প্রাচীর। খিলান হলো দুই দেয়াল বিশিষ্ট অর্ধগোলাকৃতির স্তম্ভ। এই স্তম্ভগুলো আজও টিকে আছে। বর্তমানে তা ব্যবহার উপযোগী নেই বললেই চলে। তবে ওটাম্বুবাসীর উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে অনন্য নজির হয়ে আছে পানি নিষ্কাশনের এই ব্যবস্থা। প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকার তাগিদে যুগে যুগে মানুষকে অবলম্বন করতে হয়েছে বিচিত্র সব কৌশল। এ কৌশলের কোনটা ছিল ক্ষুদ্র ও সাময়িক সময়ের জন্য আবার কোনটা ছিল বৃহৎ ও দীর্ঘস্থায়ী। টিকে থাকার লড়াইয়ে ‘মেক্সিকোর টেমবেøক পাদ্রে খাল’ ছিল মানব সভ্যতার তেমনই একটি কৌশল।