ট্রাভেলগবিডি ডেস্ক
টিলটেপেক। মেক্সিকোর দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত ঘেঁষা সায়ত্ত্বশাসিত রাজ্য অক্সাকার একটি পাহাড়ী গ্রাম। পাহাড়ী ঘন অরণ্যের মাঝে অবস্থিত ছোট্ট এই গ্রামটিতে শ তিনেক মানুষের বসবাস। জাতিতে সবাই জাপাটোক উপজাতীয় গোত্রের। আধুনিক সভ্যতার ছোঁয়া থেকে যোযন যোযন দুরত্বে অবস্থিত এই গ্রামটি দেখতে আর দশটা সাদাসিদে পাহাড়ী গ্রামের মতই।
তবে গ্রামের মানুষগুলো একেবারেই আলাদা। এই গ্রামের অধিকাংশ লোকই অন্ধ। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। গ্রামের অধিবাসীদের এই ধকরুণ পরিণতির কারণে এটি ‘অন্ধদের গ্রাম’ হিসেবে পরিচিত। আরও অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে শুধু গ্রামের অধিবাসীরা নয় তাদের পোষা পশু-পাখিগুলোও অন্ধ।
গ্রামের অধিবাসীরা কিন্তু জন্ম থেকেই অন্ধ নয়। স্বাভাবিক মানব শিশুর মতই তাদের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। এরপর কেউ কয়েক বছর, কেউ কয়েক দিন পরে সারা জীবনের মত দৃষ্টিহীন হয়ে যায়। গ্রামেরবাসীদের কাছে নিয়তীর এই নিষ্ঠুর পরিনতিই যেন স্বাভাবিক নিয়ম। তাদের বিশ্বাস গ্রামের একটি প্রাচীন গাছের অভিশাপ কারণেই তারা অন্ধত্ব বরণ করে। গাছটির নাম লাবজুয়েলা। তারা বিশ্বাস করে এই গাছ দেখার পর তারা অন্ধ হয়ে যায়।
গ্রামটির খবর বর্হিবিশ্বের কাছে প্রকাশিত হওয়ার পাবার পর গবেষকরা কোমর বেধে নেমেছিল এই রহস্য উদ্ঘাটনে। বেশ কিছ’দিন গবেষণার পর গবেষকরা অন্ধত্যের আসল রহস্য উদঘাটনে সক্ষম হয়েছেন। তারা প্রমাণ করেছেন ওই গাছের সঙ্গে এদের দৃষ্টিহীনতার কোনো সম্পর্কই নেই। একটি মাছির কামড়ে গ্রামবাসীর এই পরিণতি হয়। ব্ল্যাক ফ্লাই বা মাক্ষি নামে পরিচিত এই মাছি অত্যন্ত বিষাক্ত। এই মাছের কামড়ে শরীরে প্রবেশ করে এক ধরণের বিষাক্ত পদার্থ যা গ্রামবাসীর অন্ধত্বের জন্য দায়ী।
রহস্যময় এই গ্রামের আরও একটি রহস্যময় ব্যাপার হচ্ছে- গ্রামে প্রায় ৭০ টির মতো কুড়ে ঘর আছে যার কোনটির জানালা নেই। জানালা না থাকার ব্যাপারে গ্রামবাসীর অভিমত হচ্ছে যেহেতু তাদের দৃষ্টিশক্তি নেই সেহেতু ঘরের জানালা দিয়ে আসা আলোরও দরকার নেই। মেক্সিকো সরকার যখন এ গ্রাম সম্পর্কে জানতে পারে তখন বাসিন্দাদের অন্য স্থানে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু সেই প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে। কারণ গ্রামের লোকেরা অন্ধত্ব বরণ করতে রাজি আছে কিন্তু ভিটে মাটি ছেড়ে যেতে রাজি নয়।